ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো শেষ হতেই ‘দীপাবলির উপহার’ হাতে পেলেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীরা।
বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘোষণা, কেন্দ্রীয় কর্মীদের ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স (ডিএ) এবং পেনশনভোগীদের ডিয়ারনেস রিলিফ (ডিআর) ৫ শতাংশ বিন্দু বেড়ে মূল বেতন বা মূল পেনশনের ১৭ শতাংশ হবে। গত ১ জুলাই থেকেই এই হার কার্যকর হবে।
আজ সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিএ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হওয়ার পরে মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, ‘‘এর আগে ডিএ কখনও এক লাফে এতটা বাড়েনি। ...সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মী উপকৃত হবেন। সংসার চালাতে সুবিধা হবে অন্তত ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর।’’ তবে এর ফলে কেন্দ্রকে বছরে বাড়তি প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা জোগানোর বন্দোবস্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।
ভাতা-বৃত্তান্ত
• কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ হল, নতুন বেতন হারের উপর ১৭ শতাংশ।
• রাজ্যের কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ পুরনো বেতন হারের উপর ১২৫ শতাংশ।
• ফারাক ৪০ শতাংশ।
ডিএ বৃদ্ধি যে মোদী সরকারের তরফে ‘দীপাবলির উপহার’, তা এ দিন নিজেই বলেছেন জাভড়েকর। অনেকের মতে, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বেতন-পেনশনে সাযুজ্য রাখতে এই ঘোষণা কার্যত ছিল সময়ের অপেক্ষা। তার উপরে দরজায় কড়া নাড়ছে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভা ভোট। এই ঘোষণা সরকারি কর্মীদের ‘মন জয়ে’ সহায়ক হতে পারে।
পাশাপাশি, এই পদক্ষেপ যে অর্থনীতির বসে যাওয়া চাকায় কিছুটা গতি ফেরানোর লক্ষ্যে, এ দিন সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট মন্ত্রীর কথায়। জাভড়েকর বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্র বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে। এই সিদ্ধান্তও দীপাবলির আগে কর্মীদের মুখে হাসি ফোটাবে। অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ার প্রধান কারণ চাহিদায় ভাটা। তাই দীপাবলির ঠিক আগে এক কোটিরও বেশি কেন্দ্রীয় কর্মী ও পেনশনভোগীর হাতে বাড়তি টাকা এলে, তাঁরা কেনাকাটা বাড়াবেন বলে আশা করছে কেন্দ্র।
কিন্তু তার পরেও কিছু প্রশ্ন থাকছেই। যেমন, এর ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের ডিএ-র ফারাক বাড়বে। ফলে চাপ বাড়বে রাজ্যের উপরে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, কেন্দ্রের এ দিনের ঘোষণার পরে বকেয়া ধরে রাজ্য ও কেন্দ্রের ডিএ-র ফারাক ৪০ শতাংশ। কংগ্রেস প্রভাবিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৬-র ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-র পরিমাণ ছিল ১২৫ শতাংশ। সে দিন থেকেই তাঁদের জন্য নতুন বেতন হার চালু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেন্দ্র ডিএ বাড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। পুরনো বেতন হারের নিরিখে সেই বৃদ্ধির পরিমাণ ৪০ শতাংশ। রাজ্য সরকারি কর্মীরা এখন পুরনো বেতন হারে ১২৫ শতাংশ ডিএ পান। ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক দাঁড়াচ্ছে ৪০ শতাংশ।’’
মলয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র যদি আগামী বছরের গোড়ায় আরও ৫ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করে এবং পুরনো বেতন হারের নিরিখে সেটা যদি ১০ শতাংশ বলে ধরা হয়, তা হলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ হবে ৫০ শতাংশ। এই ডিএ দিলে তাঁরা যে পরিমাণ বেতন পাবেন, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ঘোষিত মূল বেতনের পরিমাণ তার থেকে কম।’’
শুধু রাজ্য সরকারি কর্মী নয়, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের গড় আয়ের ফারাক বাড়বে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের সঙ্গেও। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক মানুষের হাতে বাড়তি টাকা এলে তবেই বিক্রিবাটা দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। সেই সমস্যা সরকার কী ভাবে মেটাবে, সেই প্রশ্নও থাকছে।
তার উপর রয়েছে আর্থিক ঘাটতির প্রশ্ন। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হালে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণার পরে বাড়তি ডিএ সূত্রে ১৬ হাজার কোটির বোঝা চাপবে কেন্দ্রের কাঁধে। ফলে প্রশ্ন, সব সামলে ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা সম্ভব হবে তো?