—প্রতীকী চিত্র।
গত কালই কেন্দ্র জানায়, কোটার মধ্যে কোটার যে সুপারিশ সুপ্রিম কোর্ট করেছে, তা মানবে না নরেন্দ্র মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে না মানার সিদ্ধান্ত সরকার কেন বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সংসদে জানাল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন দলিত নেত্রী মায়াবতী। অন্য দিকে কংগ্রেসের মতে, দেশবাসীর নিজেদের সামাজিক অবস্থান জানার অধিকার রয়েছে। সেই কারণেই কংগ্রেস নেতৃত্ব জাতি জনগণনা করার দাবিতে সরব রয়েছে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে জানায়, তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজের মধ্যে যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁদের সংরক্ষণ বাতিল করে দেওয়া হোক। পরিবর্তে তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজে আর্থিক সিঁড়িতে যাঁরা একেবারে নীচে রয়েছেন, সেই অতি পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়তি সুবিধে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয় শীর্ষ আদালত। কিন্তু এই কোটার মধ্যে কোটা নীতি সরকার নিলে সমাজে ভুল বার্তা যাবে ওই দাবি জানিয়ে গত কাল তফশিলি জাতি ও জনজাতি সমাজের বিজেপি সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরে গত কাল রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৈঠক করে জানিয়ে দেয়, কোনও ভাবেই সংরক্ষণ নীতিতে পরিবর্তন করা হবে না। মানা হবে না কোটার মধ্যে কোটা নীতি। তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের মধ্যে যারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাদেরও সংরক্ষণের সুবিধে বজায় থাকবে। তাতে হাত দেবে না কেন্দ্র।
সরকার কেন ওই সিদ্ধান্ত সংসদের বাজেট অধিবেশনে জানাল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। ওই দলিত নেত্রীর বক্তব্য, সরকারের উচিত ছিল এ নিয়ে সংসদে মুখ খোলা। তাতে সহজেই গোটা দেশের কাছে বার্তা পৌঁছে যেত। মায়াবতী বলেন, ‘‘মামলা চলাকালীন সরকার যদি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে শীর্ষ আদালতে নিজের বক্তব্য জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হত, তা হলেই ওই সমস্যা হত না। কিন্তু তা হয়নি। উপরন্তু সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব হওয়া। তা না করে প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজের সাংসদদের আশ্বাস দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।’’ ঘরোয়া ভাবে বিএসপি নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপির একটি বড় অংশ ছাড়াও সর্বোপরি আরএসএস সংরক্ষণ প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সে ভাবে বিরোধিতায় নামেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে হেতু তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন এবং বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনও ভুল বার্তা না যায়, সে কারণে সংরক্ষণ প্রথা বাতিল করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
এ দিকে কংগ্রেস কোটার মধ্যো কোটা বিতর্কের মধ্যে না ঢুকে ফের সামাজিক জনগণনার দাবিতে সরব হয়েছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘গত দেড় বছর ধরে কংগ্রেস জাতিগত সমীক্ষার কথা বলে আসছে। এক মাত্র তা হলেই সামাজিক ভাবে কারা একেবারে পিছিয়ে রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। পিছিয়ে পড়াদের সামাজিক ন্যায় দেওয়া সম্ভব হবে।’’ পাশাপাশি সংবিধানে সংরক্ষণের সর্ব্বোচ্চ সীমা যে ৫০ শতাংশ করা আছে, তা বৃদ্ধির দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস। দল মনে করে, জাতিগত সমীক্ষা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, এ দেশে ওবিসি সমাজ সংখ্যাগুরু। ফলে নতুন করে ওবিসি সমাজের সংরক্ষণ বাড়াতে হবে। কিন্তু এতে জেনারেল শ্রেণি তথা উচ্চবর্ণের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। নীতিগত ভাবে ওই সিদ্ধান্তে রাজি হবে না আরএসএস-ও। তা বুঝেই বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে অস্বস্তিতে ফেলতে এ বার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সামনে রেখে নতুন করে জাতিজনগণনার দাবিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।