NPR

এনপিআর নিয়ে চিঠি পশ্চিমবঙ্গকে

বিরোধীদের মতে, এনপিআর হল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রথম ধাপ।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) নিয়ে জটিলতা কাটাতে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলকে চিঠি দিল অমিত শাহের মন্ত্রক। ওই দুই রাজ্যেরই এনপিআর নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজ্যগুলি আন্তরিক হলে সেই সংশয় কাটাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে প্রয়োজনে আলোচনায় রাজি, চিঠিতে সেই কথাই লেখা হয়েছে বলে সূত্রের বক্তব্য।

Advertisement

বিরোধীদের মতে, এনপিআর হল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রথম ধাপ। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনপিআর স্থগিত রেখেছেন। পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে এনপিআর হবেই না। নবান্নের শীর্ষ স্তর যদিও জানাচ্ছে, তারা এখনও এমন কোনও চিঠির কথা জানে না। প্রশ্ন হল, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি এনপিআরের বিরোধিতা করেছে। কিছু রাজ্যের বিধানসভায় সেই মর্মে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। তা হলে শুধু দু’টি রাজ্যের সঙ্গেই কেন আলোচনায় বসতে চান স্বরাষ্ট্র কর্তারা?

মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানান, শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকারই রাজ্যে এনপিআর কার্যকর করা নিয়ে সরকারি ভাবে কেন্দ্রের কাছে আপত্তি জানিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলির কাছ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও আপত্তি বা চিঠি আসেনি। সেই কারণে ওই রাজ্যগুলির আপত্তিকে এখনই গণ্য করা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরাসরি কেন্দ্রের কাছে এনপিআর নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিল। কেরল সরকারের পক্ষ থেকে সেই রাজ্যের ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া’-র স্থানীয় শাখার কাছে আপত্তি জানানো হয়। কেন্দ্রের ওই কর্তার বক্তব্য, এনপিআর নিয়ে বৈঠকে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই অনুপস্থিত ছিল। বাকি রাজ্যগুলি কিছু প্রশ্ন পরিবর্তনের দাবি করলেও

Advertisement

বৈঠকে গরহাজির থাকেনি। তাই পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের আপত্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে জনগণনার প্রথম পর্ব। তখনই এনপিআর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ২০১০ ও ২০১৫ সালেও এনপিআরের তথ্য নেওয়া হয়েছিল। এ বার বিতর্কের কারণ বাড়তি আটটি প্রশ্ন। ওই প্রশ্নগুলিতে উত্তরদাতার মাতৃভাষা, জন্মস্থান, বাবা-মা কোথায় কত সালে জন্মেছেন, তা-ও বলতে হবে। দিতে হবে আধার নম্বর। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এনপিআরের প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছে, মূলত বাংলাভাষীদের নিশানা করতেই ওই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের যুক্তি, ‘‘দিল্লি বা বেঙ্গালুরুতে থাকা কোনও বাঙালি যদি তাঁর মাতৃভাষা বাংলা, বাবা-মায়ের জন্মস্থান ও-পার বাংলা (বতর্মানে বাংলাদেশ) বলে জানান, তা হলে কেন্দ্র সেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করার কৌশল নিতে পারে বলেই আশঙ্কা। আর তিনি যদি ধর্মে মুসলিম হন তা হলে তো সোনায় সোহাগা।’’ বিরোধীদের আশঙ্কা, এই ধরনের নাগরিক কোথায় কত রয়েছেন, এনপিআরের মাধ্যমে তার তালিকা বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্র। যদিও কেন্দ্র তা অস্বীকার করেছে।

আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ফের দাবি করে, এনপিআরে উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। যদিও এই যুক্তি নিয়ে খোদ স্বরাষ্ট্র-কর্তাদের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে। বিরোধী শিবিরের মতে, বাবা-মায়ের জন্মস্থান না-জানানো বা আধার না-থাকার যুক্তি যাঁরা দেখাবেন, তাঁদের একেবারে শুরুতেই নিশানা করা হতে পারে। কারণ কোনও ব্যক্তি তাঁর বাবা-মায়ের জন্মস্থান জানেন না— এই যুক্তি আদৌ কেন্দ্রের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। প্রশ্নোত্তরের শেষে প্রত্যেক নাগরিককে হলফনামা দিয়ে বলতে হবে, তিনি জেনেশুনে ঠিক তথ্যই জানালেন। তথ্যে গরমিল ধরা পড়লে ওই ব্যক্তির জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement