ছবি পিটিআই।
আগের ছ’বারের বৈঠক নিষ্ফলা। বুধবার মোদী সরকারের সঙ্গে সপ্তম দফার বৈঠকে বসার ২৪ ঘন্টা আগে ফের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন কৃষক নেতারা। মঙ্গলবার কেন্দ্রকে চিঠিতে জানিয়ে দিলেন, নির্দিষ্ট চারটি বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছেন তাঁরা। যার মধ্যে প্রথমটিই হল, তিন কৃষি আইন রদ করার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, আইন যে ফেরাতেই হবে, সেই দাবি থেকে এক পা-ও পিছু হটার প্রশ্ন নেই। কী ভাবে সেই কাজ করা হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন তাঁরা।
সঙ্গে বাকি তিনটি বিষয় হল, ফসলের ন্যূনতম দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি, দিল্লির দূষণ রুখতে খড় পোড়ানোর জন্য চাষিদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির আইনে সংশোধন এবং বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল প্রত্যাহার। কৃষক নেতারা কৃষিসচিব সঞ্জয় আগরওয়ালকে চিঠিতে জানিয়েছেন, প্রাসঙ্গিক বিষয়ের যুক্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য এই আলোচ্যসূচি অনুযায়ী কথা বলা জরুরি।
সোমবার কৃষক সংগঠনগুলিকে চিঠি দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর বৈঠক হবে বলে জানিয়েছিলেন কৃষিসচিব। কিন্তু কৃষক নেতাদের ঠিক করে দেওয়া আলোচ্যসূচি মেনেই যে আলোচনা হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেননি। কথা দেননি কৃষি আইন প্রত্যাহারের ‘প্রক্রিয়া’ নিয়ে কথা বলার বিষয়েও। তাই এ বারের বৈঠকও কতখানি ফলপ্রসূ হবে, সে বিষয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছেই। যদিও বুধবারের বৈঠকে চাষিদের সঙ্গে আলোচনা কোন পথে এগোনো যেতে পারে, তা ঠিক করতে মঙ্গলবার কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর এবং শিল্প-বাণিজ্য তথা খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
কৃষক সংগঠনগুলি অবশ্য ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা আইন নিয়ে দর কষাকষি চায় না। কথা বলতে চায় শুধু তা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে। সচিবকে পাঠানো চিঠিতে কৃষক নেতারা লিখেছেন, ‘আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, আমরা শেষ চিঠিতে উল্লিখিত চারটি বিষয়ে কথা বলতেই বৈঠকে আসছি।’’
কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার মন্তব্য, ‘‘সমাধানের আশাতেই বৈঠকে যাচ্ছি। কিন্তু তেমনই সব থেকে খারাপ পরিণামের জন্যও তৈরি থাকছি।’’ যে ৪০টি সংগঠনের নেতাকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে পঞ্জাবের কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি বুধবারের আলোচনায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করছেন। তা থেকেই স্পষ্ট, সরকার কৃষকদের কথা কানে তুলতে রাজি নয়।
কৃষক সংগঠনের নেতারা বলছেন, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে আইনে একাধিক সংশোধন করতে রাজি হয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁরাই বাইরে আইনের পক্ষে সওয়াল করছেন। আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ তুলছেন। মন্ত্রীরা বলছেন, এমএসপি নিয়ে সরকার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি। কিন্তু কী ভাবে সেই গ্যারান্টি দেওয়া হবে, তাতে আইনি সিলমোহর থাকবে কি না, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই।
কৃষি ক্ষেত্রের সংস্কারের লক্ষ্যে তিন আইন এনেছে কেন্দ্র। প্রথম আইন বেসরকারি সংস্থাকে চুক্তিচাষ করিয়ে কৃষকদের থেকে সরাসরি ফসল কিনে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে। চুক্তিচাষে কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় দ্বিতীয় আইন আনা হয়েছে। তৃতীয়টিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধন করে বেসরকারি সংস্থাকে যত খুশি খাদ্যশস্য মজুত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর পরেই অভিযোগ ওঠে, মোদী সরকার ধীরে ধীরে চাষিদের থেকে এমএসপি-তে ফসল কেনা বন্ধ করে দিতে চাইছে। অম্বানী-আদানির মতো সংস্থার হাতে পুরো কৃষি ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে চাইছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এর বিরুদ্ধেই দিল্লির সীমানায় কৃষকরা অবরোধ করছেন। এ দিন রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানায় গিয়ে চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সদ্য এনডিএ ছাড়া রাষ্টীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির নেতা হনুমান বেনিওয়ালও।
এই সমস্ত কিছুর মধ্যে আবার পঞ্জাবে প্রায় ১,৫০০ মোবাইল টাওয়ারের উপরে প্রতিবাদী চাষিদের হামলায় দানা বাঁধছে বিতর্ক। শোনা যাচ্ছে, মূলত রিলায়্যান্সের উপরে ক্ষোভ তাদের টেলি পরিষেবা সংস্থা জিয়োর উপরে উগরে দিতে ওই কাজ করেছেন চাষিরা। কিন্তু এ দিন ওই ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি জারি করেছে টেলিকম সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআই। তাদের বক্তব্য, টেলিকমের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষতি হলে, দুর্ভোগ বাড়বে সাধারণ মানুষের। এমন কাজ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে পঞ্জাব পুলিশ। গতকাল যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহও।