ছবি রয়টার্স।
শুধু আখের রস নয়। চাল ও ভুট্টার মতো খাদ্যশস্য থেকে আরও বেশি পরিমাণে ইথানল তৈরিতে উৎসাহ দিতে ৪,৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করল মোদী সরকার। এর দৌলতে নতুন ডিস্টিলারি বা ভাটিখানা খুলতে আগামী পাঁচ বছর কম সুদে ঋণের বন্দোবস্ত হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রলে ২০% ইথানল মেশানোর লক্ষ্য স্থির করেছে কেন্দ্র। তাতে পেট্রলের চাহিদা কমবে। সেই সূত্রে কমবে বিদেশ থেকে অশোধিত তেল আমদানির খরচ। সরকারের দাবি, এই প্রকল্পে টাকা জোগানো সেই কারণেই। কিন্তু তেমনই বিরোধীদের প্রশ্ন, চালের মতো খাদ্যশস্য বাড়তি উৎপাদন হয়ে থাকলে, আগে তা বিলি করে গরিবের পাতে ভাত না-জুগিয়ে সরকার ইথানল তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে কেন?
২০৩০ সালের লক্ষ্য পূরণের জন্য আরও ১,০০০ কোটি লিটার ইথানল প্রয়োজন। এখন দেশে আখের রস, গুড় থেকে তা তৈরি হয় প্রায় ৪০০ কোটি লিটার। ইথানল ব্যবহার হয় মদ তৈরির জন্যও। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত, এই প্রকল্পে পাঁচ বছরের জন্য সুদে ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি এক বছরের জন্য ঋণ মকুব করা হবে। আখের রসের পাশাপাশি খাদ্যশস্য থেকে ইথনাল তৈরির জন্য নতুন ডিস্টিলারি তৈরি বা চালু ডিস্টিলারির সম্প্রসারণে এই সুবিধা মিলবে।
এখানেই গরিবের পাতে ভাতের প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। লকডাউন ঘোষণার পরে কেন্দ্র বাড়তি রেশন হিসেবে বিনামূল্যে মাথা পিছু ৫ কিলোগ্রাম করে চাল বা গম এবং পরিবার পিছু ১ কিলোগ্রাম করে ডাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু নভেম্বরের পরে সেই সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারের গুদামে চাল-সহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উপচে পড়ছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য ‘বাফার স্টকে’ যে পরিমাণ চাল থাকা জরুরি, সরকারি গুদামে মজুত রয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। বিরোধীদের প্রশ্ন, সরকার কি এই বাড়তি চাল থেকে মদ তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে?
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০৩০ সালে যে ১,৪০০ কোটি লিটার ইথানল প্রয়োজন হবে, তার মধ্যে ৭০০ কোটি লিটার আসবে আখের রস থেকে। বাকি ৭০০ কোটি লিটারের উৎস হবে চাল-গম-ভুট্টা-বার্লির মতো খাদ্যশস্য। তার জন্য দরকার হবে প্রায় ১৭৫ লক্ষ টন খাদ্যশস্য। প্রশ্ন উঠছে, ভর্তুকি নেওয়ার পরেও বেসরকারি সংস্থাগুলি যে চাল থেকে ইথানল তৈরি করে তা মদ তৈরির জন্য বেচে দেবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
তেল মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার কাছে অন্তত ৭৫% ইথানল বেচতে বাধ্য থাকবে এই সংস্থাগুলি। মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘‘সরকারই তেল সংস্থাগুলির মাধ্যমে অধিকাংশ ইথানল কিনে নেবে।’’