ছবি পিটিআই।
চাষিরাও হাতে নগদ পেলেন না। কিন্তু অনেক দিন ধরেই কৃষিক্ষেত্রের যে সব সংস্কার নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল, করোনা-সঙ্কটের ‘সুযোগ’ নিয়ে মোদী সরকার আজ তার ঘোষণা করে ফেলল। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে খাদ্যশস্য মজুত ও কৃষিপণ্য বিপণন আইনে ফসল বেচার উপরে যে সব বিধিনিষেধ ছিল, নতুন আইন এনে, পুরনো আইন বদলে সেই সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হল।
কেন্দ্রের দাবি, চাষিদের সামনে গোটা বাজার খুলে যাওয়ায় আগামী দিনে ফসলের আরও ভাল দাম পাবেন।
কৃষক সংগঠনগুলির অবশ্য অভিযোগ, চাষিদের থেকেও কৃষিপণ্যের ব্যবসাদার, খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির সুবিধার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কংগ্রেস ও কৃষক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, আইন বদলে যদি ফায়দা হয়, সে তো ভবিষ্যতে! অর্থমন্ত্রী সরকারি কোষাগার থেকে কিছুই খরচ করছেন না। কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার তহবিল তৈরি ছাড়া বাকি সব ঘোষণাই বাজেটে হয়ে গিয়েছে। তাতে অর্থ বরাদ্দও বিশেষ বাড়েনি। এখন চাষির হাতে টাকা আসবে কোথা থেকে?
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “আমরা হাতে টাকা পাইয়ে দেওয়ার বদলে ক্ষমতায়নের উপরে জোর দিচ্ছি, যাতে গরিব চাষিরা নিজেদের রোজগার বাড়াতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্র মেনে আত্মনির্ভর হতে পারেন।” কিন্তু এখন তাঁদের পেট চলবে কী করে? নির্মলার উত্তর, “আমরা তো মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দিয়েছি। গরিবদের নিখরচায় রান্নার গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও কিছুই যথেষ্ট নয়। তা-ও আমরা চেষ্টা করছি।’’
কী রয়েছে কৃষিক্ষেত্রের সংস্কারে? এক, স্বাধীনতার পরে কালোবাজারি ও বেআইনি মজুত রুখতে যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন তৈরি হয়েছিল, তা সংশোধন করা হবে। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করা যাবে। একমাত্র যদি না মহামারি বা জাতীয় দুর্যোগ আসে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা, রফতানিকারী সংস্থাগুলিকে একসঙ্গে অনেক খাদ্যশস্য মজুত করতে হয়। নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা বাড়বে, আরও লগ্নি আসবে। দুই, রাজ্যে রাজ্যে কৃষিপণ্য বাজার কমিটি আইন মেনে চাষিরা শুধু নির্দিষ্ট মান্ডিতে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের কাছেই ফসল বেচতে পারেন। রাজ্যের আইনের বদলে কেন্দ্র নিজের আইন আনবে। তাতে চাষিরা যেখানে ভাল দাম পাবেন, সেখানেই ফসল বেচতে পারবেন। তিন, বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে চাষিদের ঠকাতে না পারে, তার জন্য আইনি কাঠামো তৈরি হবে।
কৃৃষি-অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটির যুক্তি, ‘‘চাষিদের সামনে গোটা বাজার খুলে যাওয়ায় তাঁরা আরও ভাল দাম পাবেন।’’ তাঁর মতে, এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়বে। রিলায়্যান্স, আদানির মতো সংস্থা কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো তৈরি করবে। কিন্তু কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘এতে কৃষিপণ্যের ব্যবসাদার, বহুজাতিক সংস্থাগুলি ফায়দা তুলবে। কোনও ফসলের দাম তলানিতে ঠেকলেও চাষিদের কেউ দেখার থাকবে না।’’
কৃষিপণ্য বাজার নিয়ে কেন্দ্র আগে মডেল আইন তৈরি করে রাজ্যগুলিকে তা অনুসরণ করতে বলেছিল। কিন্তু অনেক রাজ্যই রাজি হয়নি। আর্থিক বিষয়ক সচিব তরুণ বজাজের দাবি, ‘‘বিষয়টি যৌথ তালিকায় রয়েছে। কেন্দ্র আইন তৈরি করতে পারে। সেই আইনই প্রাধান্য পাবে।’’