ক্ষোভের কথা ভেবেই নাম ঘোষণায় বিলম্ব

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেন্দ্র জানে এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা। তাই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০৩
Share:

রাম মন্দিরের স্তম্ভ তৈরি চলছে অযোধ্যায়। ফাইল চিত্র

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য গঠিত ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে সরকারি ভাবে এখনও একটি নাম ঘোষিত হয়েছে। সেই নামটি প্রবীণ আইনজীবী কে পরাশরনের। দিল্লিতে গ্রেটার কৈলাসে যাঁর বাড়িই হবে ‘শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র’ নামে ওই স্বাধীন ট্রাস্টের ঠিকানা। বাকি ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের নাম সরকারি সূত্রে ভেসে উঠতেই সাধু-সমাজে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। অনেকেই বলছেন, সরকার জানে, যে কোনও সময়ে এই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হতে পারে। সম্ভবত তাই দিল্লি ভোটের আগে ট্রাস্টের সদস্যদের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি মোদী সরকার।

Advertisement

ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে পরাশরনের নাম নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষেই ক্ষোভ নেই। ঠিক তেমনই ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে যে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের নাম ভাসছে, তা-ও প্রথম থেকে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু যাবতীয় টানাপড়েন ১০-১১টি নামকে কেন্দ্র করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেন্দ্র জানে এ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা। তাই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েছে তারা। প্রথমত, দিল্লি ভোটকে মাথায় রেখে এখনও সরকারি ভাবে অধিকাংশ নামই ঘোষণা করা হয়নি। যাতে ভোট মিটলে আলোচনার টেবিলে বসে ক্ষোভ সামাল দেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, কিছু নাম ভাসিয়ে দেওয়ার পরেও তা গুনতিতে দাঁড়াচ্ছে ১২টি। অর্থাৎ, সব পক্ষের কথা শুনে আরও কয়েক জনকে ট্রাস্টে ঢোকানোর পথ খোলা রাখা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

Advertisement

কে পরাশরন

• রামলালার আইনজীবী। বয়স ৯২

• ইন্দিরা ও রাজীব গাঁধীর জমানায় অ্যাটর্নি জেনারেল।

• পদ্মসম্মানপ্রাপ্ত। রাজ্যসভার প্রাক্তন মনোনীত সদস্য।

স্বামী বাসুদেবানন্দ সরস্বতী

• প্রয়াগরাজের শঙ্করাচার্য।

মাধবাচার্য স্বামী বিশ্ব প্রসন্নতীর্থ

• কর্নাটকে উদুপির পেজাবর মঠের ৩৩তম প্রধান।

পরমানন্দ মহারাজ

• হরিদ্বারের অখণ্ড আশ্রমের প্রধান। • ২০০০ সালে বক্তৃতা রাষ্ট্রপুঞ্জের ধর্মসভায়।

গোবিন্দ দেব গিরি

• মহারাষ্ট্রে হিন্দু ধর্মচর্চায় পরিচিত নাম।

বিমলেন্দু মোহন প্রতাপ মিশ্র

• অযোধ্যার রাজ পরিবারের সদস্য। রয়েছেন রামায়ণ মেলা কমিটিতেও।

অনিল মিশ্র

• হোমিওপ্যাথি ডাক্তার।
• উত্তরপ্রদেশে হোমিওপ্যাথি ওষুধ পর্ষদের রেজিস্ট্রার। ১৯৯২ সালে রাম মন্দির আন্দোলনের অন্যতম কারিগর

কামেশ্বর চৌপল

• ট্রাস্টের দলিত মুখ।
• ১৯৮৯ সালে রাম মন্দিরের শিলান্যাসের জন্য প্রথম ইট পেতেছিলেন

• সঙ্ঘের তরফে প্রথম করসেবকের তকমা পটনার এই বাসিন্দাকেই

মহন্ত ধীনেন্দ্র দাস

• নির্মোহী আখড়ার প্রধান।

এ ছাড়াও...

• কেন্দ্রের তরফে যুগ্মসচিব পদের এক আইএএস।

• রাজ্যের এক আইএএস।

• অযোধ্যার জেলাশাসক পদাধিকার বলে ট্রাস্টি। তিনি হিন্দু না-হলে, তাঁর বদলে পরিষদে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট।

• চেয়ারম্যান বাছাই করবেন বোর্ড সদস্যরা

• ১৫ সদস্যের মধ্যে ১১ জনের ভোটাধিকার থাকবে। সরকারি অফিসারদের ভোটাধিকার নেই

* পরাশরন বাদে বাকি নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে সেগুলি সরকারি সূত্রে পাওয়া।

করসেবা থেকে শুরু করে বিতর্কিত জমিতে মন্দির নির্মাণে শপথ— প্রথম থেকে যাঁরা আন্দোলনে যুক্ত, তাঁরা কেউই ট্রাস্ট গঠন প্রসঙ্গে সরাসরি সমালোচনা করছেন না। কিন্তু ক্ষোভ যে রয়েছে, তা বোঝা যায় কথা বললেই। যেমন, রাম মন্দির আন্দোলনের মুখ হিসেবে নিজেদের বরাবর তুলে ধরা রাম মন্দির ন্যাসের প্রধান নিত্যগোপাল দাস সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বলেছিলেন, ‘‘এই ন্যাস তো আসলে ট্রাস্ট। তা তৈরি হয়েই আছে। এ বার তার উপরে শুধু সরকারি সিলমোহরের অপেক্ষা।’’ আজ ন্যাস সূত্রের খবর, যে নামগুলি ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে শোনা যাচ্ছে, তাতে খুশি নয় তারা। তাদের আশঙ্কা, যে ভাবে ট্রাস্ট তৈরি হচ্ছে, তাতে মন্দিরে যতটা নিয়ন্ত্রণ ন্যাস রাখবে মনে করেছিল, তা ধাক্কা খেতে পারে।

আরও পড়ুন: এনপিআর নিয়ে অমিতের উল্টো সুর প্রধানমন্ত্রীর

সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের জন্য নির্মোহী আখড়ার প্রতিনিধিকে ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত করার রাস্তা খোলা রাখলেও, তাতে আপত্তি ছিল ন্যাসের। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, অছি পরিষদে ঠাঁই পেতে চলেছেন ওই আখড়ার মহন্ত ধীনেন্দ্র দাস। তাতেও চটেছে ন্যাস। অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘ঘটা করে মন্দিরের শিলান্যাস হবে বলে শোনা যাচ্ছে, তা কেন? উৎসব হোক আপত্তি নেই। কিন্তু শিলান্যাস তো বহু আগেই হয়ে গিয়েছে। তা হলে তার কি মূল্য নেই?’’

আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে তা জানা আছে’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement