সিংঘুতে প্রতিবাদী কৃষকদের জমায়েতে। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার কৃষক সংগঠনগুলির ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চাইছে।
কেন্দ্র মনে করছে, তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন দু’-তিনটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কৃষকদের ডাকে ৮ ডিসেম্বরের ভারত বন্ধকে প্রায় সব বিরোধী দল সমর্থন জানালেও, গোটা দেশে তেমন প্রভাব পড়েনি। এমনকি, খুব বেশি জায়গায় রেলও আটকাতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। তা সত্ত্বেও কৃষকদের আপত্তি মেনে সরকার আইনে বেশ কিছু সংশোধনে রাজি হলেও আইন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় বলেই কেন্দ্রের মত।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লির শাহিন বাগেও সিএএ-র বিরুদ্ধে ১০১ দিন রাস্তা আটকে আন্দোলন চলেছিল। এখানে তো দিল্লির সীমানায় মাত্র দু’সপ্তাহ সড়ক অবরোধ চলছে। সেখানে গোটা দেশের চাষিরা অংশ নিচ্ছেন, এমনও নয়।’’
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষক সংগঠনগুলিকে কেন্দ্র গতকাল জানিয়েছিল, সরকার তিন আইনে বেশ কিছু সংশোধন করতে রাজি। কিন্তু কৃষক নেতারা সরকারের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেন, আইনগুলিই প্রত্যাহার করতে হবে। মোদী সরকার আজ পাল্টা বার্তা দিয়েছে, সরকার আইন প্রত্যাহার করবে না।
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর ও খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল আজ সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তোমর বলেন, ‘‘কোনও আইন পুরোপুরি খারাপ হতে পারে না।’’ কৃষক নেতাদের কোর্টেই বল ফেরত পাঠিয়ে কৃষিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষক সংগঠনগুলি চাইলে সরকারের ওই প্রস্তাব নিয়েই ফের আলোচনা চাইতে পারে। সরকার কথা বলতে তৈরি। সরকারের দিক থেকে কৃষক সংগঠনগুলিকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হবে, এমন কোনও ইঙ্গিত তিনি দিতে চাননি।
মানবিক: নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের চা দিচ্ছেন আন্দোলনরত এক কৃষক। বৃহস্পতিবার দিল্লির কাছে গাজ়িপুর সীমানায়। পিটিআই
কৃষক সংগঠনগুলি কালই আন্দোলন আরও জোরদার করার ডাক দিয়েছিলেন। হরিয়ানা থেকে দিল্লি, গাজ়িয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ঢোকার সড়ক অবরোধের পরে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জয়পুর থেকে দিল্লিতে ঢোকার সড়ক অবরোধ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সরকারি সূত্র বলছে, এত শক্তি কৃষক সংগঠনগুলির রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আন্দোলন চলাকালীন বা বন্ধের দিনও কয়েকটি মাত্র জায়গায় রেল রোকো হয়েছে।
কেন্দ্রের এক মন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শাহিন বাগের আন্দোলনের পর সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছে, প্রতিবাদের নামে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের রাস্তা বা এলাকা অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ করে রাখা যাবে না। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে হবে নির্দিষ্ট এলাকায়। তা সে শাহিন বাগ হোক বা অন্য কোথাও। প্রশাসনকে ওই সব এলাকা অবরোধমুক্ত করতে পদক্ষেপ করতেই হবে।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায় পক্ষে থাকলেও হরিয়ানা বা দিল্লির পুলিশকে দিয়ে অবরোধ তোলার কথা ভাবা হচ্ছে না। ওই মন্ত্রী বলেন, ‘‘হরিয়ানা-সিংঘু সীমানায় অবরোধের এলাকায় হরিয়ানা সরকারের হাজার খানেক কর্মীকে নিযুক্ত করা হয়েছে।’’
কৃষিমন্ত্রী অবশ্য এ দিন শীত ও কোভিডের কথা মাথায় রেখে কৃষক সংগঠনগুলিকে আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আনুষ্ঠানিক ভাবে। কিন্তু কৃষক সংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, জয়পুর-দিল্লি সড়কের সঙ্গে তাঁরা ফের পঞ্জাব-হরিয়ানায় রেললাইন অবরোধ করবেন। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, পোটা, টাডা, মিসা-র মতো আইনও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করলে সরকারের কী ক্ষতি হবে? কংগ্রেস এ দিন কৃষক আন্দোলনে প্রাণ হারানো দশ জনের নাম প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছে, এর পরেও কি প্রধানমন্ত্রীর মন নরম হয় না? কৃষক সংগঠনের হিসেবে, এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চার জনের দুর্ঘটনায়, দশ জন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে, এক জনের ঠান্ডায়। আজও টিকরী সীমানায় এক জন ষাট বছরের ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, তাঁরা পিছু হটছেন না।