মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে তামাক-লবি ও সিগারেট সংস্থাগুলির জয় হল বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, আমেরিকায় ই-সিগারেটের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চান। নরেন্দ্র মোদী সরকার আজ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করল।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে তামাক-লবি ও সিগারেট সংস্থাগুলির জয় হল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, শহরের তরুণ প্রজন্ম ই-সিগারেটের দিকে ঝুঁকছে। আজ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরে আইটিসি-র মতো সিগারেট সংস্থাগুলির শেয়ারের দর বাড়তে শুরু করে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, ই-সিগারেট বন্ধে অধ্যাদেশ জারি হবে। দেশে ই-সিগারেটের ব্যবসা, বিক্রি বা বিপণন করলে প্রথম বার অপরাধে এক বছরের জেল বা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা দু’টি শাস্তিই হতে পারে। দ্বিতীয় বার ওই অপরাধ করলে সাজা হতে পারে ৩ বছর জেল ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সম্প্রতি ই-সিগারেটের উপরে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে গঠিত হয় মন্ত্রিগোষ্ঠী। তিনি আজ বলেন, ‘‘প্রথমে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (এন্ডস)-কে সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকারক বিকল্প হিসেবে দেখা হলেও, এখন দেখা যাচ্ছে, তা নয়। এতে নিকোটিনের নেশা তৈরি হচ্ছে। অনেকে ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ বা ‘কুল’ হিসেবে দেখে ব্যবহার করতে শুরু করছেন। তার পর নেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।’’
ই-সিগারেট ও তামাক
• সিগারেটের মতো দেখতে এই যন্ত্রের তরল নিকোটিন ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। যা টেনে নেন ধূমপায়ী।
• ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, তরলে নিকোটিনে ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা থাকে। যা ফুসফুস ও
গলার জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিনের ব্যবহারে, বমি ভাব, কাশি, জিভে দানার মতো উপসর্গ হয়।
সিগারেট-লবির চাপ
• ক্রমশ ধূমপায়ীর সংখ্যা কমছে। সরকার করের বোঝা চাপাচ্ছে। ২০১৬-র শেষ হিসেব অনুযায়ী, জনসংখ্যার মাত্র ২.৮৬ শতাংশ সিগারেট খান।
• দেশে বছরে ১১ হাজার কোটি সিগারেট তৈরি হয়। বিশ্বের ধূমপায়ীদের ১১.৩ শতাংশ ভারতে।
• ২০০৯-এ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল জনসংখ্যার ৩৪.৬ শতাংশ। ২০১৬-য় তা নেমে এসেছে ২৮.৬ শতাংশে।
• তামাক-ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সিগারেট খান, বাকিরা গুটখা, খৈনি বা বিড়ি।
ভারতে কতজন ই-সিগারেট ব্যবহার করেন? তার ফলে কতজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? সে সম্পর্কে কোনও তথ্য অবশ্য সরকারের কাছে নেই। ই-সিগারেটের অপকারিতা বোঝাতে নির্মলা আজ আমেরিকার তথ্য তুলে ধরে জানান, সেখানে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার ৭৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এ দেশে তামাকের ব্যবহারের ফলে বছরে অন্তত ৯ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তা হলে কেন্দ্র সিগারেট-গুটখা নিষিদ্ধ করছে না কেন? কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘এটা পরামর্শ হিসেবেই নিচ্ছি।’’ সরকারি সূত্রের বক্তব্য, দেশে তামাক শিল্পে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। সিগারেট, তামাকের উপরে কর থেকে সরকারের বার্ষিক আয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। রফতানি থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা আসে। কিন্তু যাঁরা ই-সিগারেট আমেরিকা-চিন থেকে আমদানি করছেন, ব্যবসা করছেন, তাদের কোনও লাইসেন্স নেই। কোনও রাজস্ব আয়ও হয় না।