কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি পিটিআই।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় বার বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির প্রতি শান্তির বার্তা দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকির মুখে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রাজ্যগুলির দাবি অনেকটাই মেনে নিয়ে জানিয়েছিল, ঘাটতির ১.১ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রই ধার নেবে। তবে সরাসরি ক্ষতিপূরণ না-করে সেই টাকা ফের ধার দেওয়া হবে রাজ্যগুলিকে। রাজ্যগুলিকেও অবশ্য সেই টাকা শোধ করতে হবে না। ২০২২ সালের পরেও জিএসটি সেস চালু রেখে তা পুষিয়ে দেওয়া হবে।
আর শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজ্যগুলিকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, রাজ্যের জিডিপি-র আরও ০.৫% ঋণ নেওয়ার অনুমতিও সব রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যগুলি আরও ১.০৬ লক্ষ কোটি টাকা নিঃশর্তে ঋণ নিতে পারবে। ফলে সব মিলিয়ে রাজ্যগুলির সামনে মোট ২.১৬ লক্ষ কোটি টাকা জোগাড়ের রাস্তা খুলে গেল।
আরও পড়ুন: কোভিড সামলাতে ১ লক্ষ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন কিনছেন মোদী
কেন্দ্রের প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন অন্যান্য বিরোধী-শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নবান্ন সূত্রে ইঙ্গিত, জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তা থেকে সরে আসতে পারে রাজ্য। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার আগে অন্য রাজ্যগুলির অবস্থানও দেখে নিয়ে চায় নবান্ন।
দু’দিন আগেও একরোখা মনোভাব নেওয়া সীতারামন আজ তাঁর চিঠিতে বলেছেন, “রাজ্যগুলি কী পরিমাণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, সে বিষয়ে আমি অবহিত।” সীতারামনের এই ‘হৃদয় পরিবর্তন’-কে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। বাম-শাসিত কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকও একে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে চিদম্বরমের দাবি, পরের ধাপের ১.০৬ লক্ষ কোটি টাকাও কেন্দ্রই ধার নিয়ে রাজ্যগুলিকে ধার দিক। আইজ্যাকেরও প্রশ্ন, কেন্দ্র পুরো টাকাটাই ঋণ নিচ্ছে না কেন? বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে ঝাড়খণ্ড অবশ্য কেন্দ্রের প্রস্তাবে নারাজ।
আরও পড়ুন: মেয়েদের বিয়ের সঠিক বয়স নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: মোদী
লকডাউনের জেরে আয় কমে যাওয়ায় জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ চলতি ও আগামী বছরে রাজ্যগুলিকে মোট ২.৩ লক্ষ কোটি টাকা দিতে হত বলে অনুমান। সীতারামনের যুক্তি, এর মধ্যে চলতি অর্থ-বছরে রাজ্যগুলি পেত ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা। তার থেকে অনেক বেশি, ২.১৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে রাজ্যগুলিকে জোগাড় করে দিচ্ছে কেন্দ্র। জিএসটি ক্ষতিপূরণের ১.১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কম থাকবে। জিএসটি ক্ষতিপূরণের বাইরে যে আরও ১.০৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তার জন্য চার দফা প্রশাসনিক সংস্কারের শর্তও শিথিল করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হল, কেন্দ্র যদি শেষ পর্যন্ত রাজ্যের দাবি অনেকটা মেনেই নেবে, তা হলে প্রথমে একরোখা মনোভাব নিয়ে নির্মলা তিক্ততা বাড়ালেন কেন? কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যগুলির সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুমকিই পিছু হটার অন্যতম কারণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বলেছিল, কেন্দ্রেরই ধার করা উচিত। তা হলে সব রাজ্য একই সুদে ঋণ পাবে। তা ছাড়া, রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাতে গেলে কৃষি সংস্কারের আইনের রূপায়ণ নিয়েও সমস্যা হত। এমনিতেই কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলি কৃষি আইন নিয়ে আদালতে যাওয়ার ও রাজ্যের নিজস্ব আইন আনার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে।