পরিযায়ী শ্রমিক ফেরানো ইস্যুতে সঞ্জয় রাউতের (ডান দিকে) নিশানায় সোনু সুদ।
পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে তিনি উদ্ধারকর্তা। মহারাষ্ট্রে আটকে পড়েছেন বা দুর্দশায় আছেন, এমন কথা কানে পৌঁছলেই তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন বা থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। কিন্তু সেই বলিউড অভিনেতা সোনু সুদের উপরেই বেজায় চটেছে মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের অন্যতম শরিক শিবসেনা। সোনুকে ‘সেলিব্রিটি ম্যানেজার’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে দলের মুখপত্র ‘সামনা’য়। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে শিবসেনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘‘খুব শীঘ্রই সোনু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।’’
মুম্বইয়ের বিভিন্ন সূত্রে খবর, সোনু ও তাঁর বন্ধু রেস্তরাঁর মালিক নীতি গয়াল এবং তাঁদের দল মিলে মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় ২০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে নিজের রাজ্যে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে সম্প্রতি ২০০ ইডলি বিক্রেতাকে মুম্বই থেকে তামিলনাড়ুতে পাঠিয়েছেন বাসে করে। তাঁরা সোনুর জন্য ‘আরতি’ পর্যন্ত করেছেন। শুধু বাসেই নয়, ট্রেনে বা শ্রমিক স্পেশালে, এমনকি বিমানে পর্যন্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের অনককে নিজের রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন বলিউডের ‘খলনায়ক’ সোনু।
এই কর্মকাণ্ডের মধ্যেই গত ৩১ মে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎসিংহ কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করেন সোনু। তাঁর নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে রাজ্যপালকে জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল তাঁর প্রশংসা করে ‘মহাত্মা সুদ’ আখ্যাও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন সোনু। যদিও বলিউড অভিনেতা নিজে সে সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘‘অফার আছে। তবে রাজনীতিতে আমি আগ্রহী নই।’’ তিনি আরও জানান, অভিনয় পেশায় ভাল কাজ করছেন এবং রাজনীতিতে যোগ দেবেন না।
আরও পড়ুন: ভারতে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছবে আগামী ২-৩ মাসে, হুঁশিয়ারি এমস-এর অধিকর্তার
কিন্তু গোটা এই পর্বে বেজায় অসন্তুষ্ট ছিল শিবসেনা। কিন্তু প্রকাশ্যে এত দিন সোনুর বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি শিবসেনা নেতারা। শেষ পর্যন্ত সেই কাজে বেছে নেওয়া হল দলের মুখপত্র ‘সামনা’কে। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে সঞ্জয় রাউত বরবার ‘মহাত্মা সুদ’ লিখে তাঁকে যেমন বিদ্রুপ করতে চেয়েছেন, তেমনই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনাও উস্কে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, লকডাউনের সময় একজন নতুন ‘মহাত্মা’র আবির্ভাব হয়েছে। বলা হচ্ছে ওই অভিনেতা লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে পাঠিয়েছেন। আবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালও ‘মহাত্মা সুদ’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এর অর্থ রাজ্য ও কেন্দ্র কোনও কাজই করছে না। এ ছাড়া তিনি লিখেছেন, সোনু শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং সেলিব্রিটি ম্যানজার হয়ে যাবেন।
একই সঙ্গে সোনুর কাজকর্ম নিয়ে একাধিক প্রশ্নও তুলেছেন শিবসেনা নেতা। লকডাউনের মধ্যে অভিনেতা বাস জোগার করলেন কী ভাবে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অনেক রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের নিতে চাইছে না। তা হলে এই পরিযায়ী শ্রমিকরা যাচ্ছেন কোথায়? অর্থাৎ সোনুর উদ্যোগে যাঁরা ঘরে ফিরছেন, তাঁরা আদৌ ঘরে ফিরছেন কি না, সেই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছেন রাউত।
আরও পড়ুন: ফেরাল আট হাসপাতাল, বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু গর্ভবতীর
গত বছর মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা ঘিরে দীর্ঘদিনের জোট শরিক বিজেপির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় শিবসেনার। সরকার গঠন করে শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস। তার পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্ক কার্যত আদায়-কাঁচকলায়। সেই বিজেপিতে সোনু সুদের যোগ দেওয়ার জল্পনা এবং রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে সরাসরি তাঁর রাজভবনে চলে যাওয়া শিবসেনা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সেই অবস্থানেরই প্রতিফলন সামনাতেও।