কার্তি চিদম্বরম ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়।
আইএনএক্স মিডিয়া কেলেঙ্কারির তদন্তে পিটার-ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও কার্তি চিদম্বরমের মধ্যে ই-মেল চালাচালি নিয়ে পি চিদম্বরমকে প্রশ্ন করতে চায় সিবিআই। সিবিআই সূত্রের খবর, সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তে উদ্ধার হওয়া ই-মেলে আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীর বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা, ঘুষের বিনিময়ে তা কী ভাবে ধামাচাপা দেওয়া যায়— এ সব নিয়ে কার্তির সঙ্গে পিটার-ইন্দ্রাণীর কথাবার্তা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে চিদম্বরমের প্রভাব কাজে লাগিয়েই কার্তি গোটা বিষয়টি সামলানোর দায়িত্ব নেন। তা নিয়েই চিদম্বরমকে দীর্ঘ জেরা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে চিদম্বরমের তরফে আজ নতুন হলফনামা দিয়ে অভিযোগ তোলা হয়, সুবিধা মতো উত্তর পেতে ‘দমনমূলক পন্থা’ বা চাপ দেওয়ার কৌশল নেওয়া হতে পারে। চিদম্বরমের যুক্তি, সিবিআই ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা আর প্রথম থেকেই হেফাজতে নিয়ে জেরা করা, দুইয়ের মধ্যে গুণগত ফারাক আছে। তাঁকে চাপ দেওয়ার রাস্তা নেওয়া হতে পারে। আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী জেরায় পাওয়া জবাব আদালতে প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়।
চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, গ্রেফতারের আগে চিদম্বরমকে তিন বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তখন তদন্তকারী অফিসার তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছেন। তদন্ত নিরপেক্ষ ভাবে চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ওই বয়ান চেয়ে পাঠানো হোক। চিদম্বরম তাঁর নামে ইডি-র করা মামলার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। মামলা করেছেন তাঁকে সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশের বিরুদ্ধেও। আগামিকালও ওই মামলার শুনানি চলবে। সিঙ্ঘভি এ দিন বলেন, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংস্থা খুলে টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনের যে ধারায় ইডি মামলা করেছে, সেটি চালুই হয়েছে ২০০৯-এ। অথচ অপরাধের অভিযোগ ২০০৭-এ। এ দিকে সেই অপরাধে চিদম্বরমকে ইডি ‘কিংপিন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই দিল্লি হাইকোর্ট তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়।
হাইকোর্টের রায়ের পরেই সিবিআই চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে তাঁর জোড় বাগের বাড়িতে যায়। কিন্তু সেখানে তিনি ছিলেন না। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, চিদম্বরম নিজের মোবাইল সহকারীর হাতে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের টেকনিকাল সার্ভেলেন্স টিম তা দেখে তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। পরের দিন তিনি কংগ্রেস দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে যান। সিবিআই তা টের পায়নি একই কারণে।
কার্তি ও চিদম্বরমের পরিবার আজ বিবৃতিতে বলেছে, আজগুবি অভিযোগ যাচাই না-করে সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার চায়,
চিদম্বরমকে কালিমালিপ্ত করতে। তাঁর সততায় কোনও দাগ নেই। পাঁচ দশক ধরে তিনি মানুষের সেবা করছেন।
আর কার্তির কথায়, ‘‘আমরা ছোট্ট পরিবার। টাকাকড়ি রয়েছে যথেষ্ট। সবাই আয়কর দিই। টাকার লালসা নেই। বেআইনি পথে টাকা কামানোর প্রয়োজনও নেই। তাই বিভিন্ন দেশে সম্পত্তি, একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বহু ভুয়ো সংস্থার অভিযোগ শুনে আমরা স্তম্ভিত। ভূতের গল্পের বই থেকে তুলে আনা হয়েছে এ সব। এক দিন সব ভূত কবরে যাবে।’’