সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
সিবিআই একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র সংস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গ নয়। পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই তদন্তের অনুমতি সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এমনটাই সওয়াল করলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করা মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজ্যে সিবিআই তদন্তের ঢালাও ছাড়পত্র বা ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সিবিআই একের পর এক মামলায় এফআইআর করতে শুরু করায় তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত দু’বছরে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের বিবাদের এই মামলা কুড়ি বার শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হলেও বার বার পিছিয়ে গিয়েছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনানির জন্য শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চে উঠেছিল। সেখানেই এই মামলা সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু আপত্তির কথা জানান সলিসিটর জেনারেল।
সিবিআইয়ের সক্রিয়তার বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ সংক্রান্ত ‘অরিজিনাল সিভিল স্যুট’ দায়ের করেছিল রাজ্য। সেখানেই প্রাথমিক ভাবে আপত্তি জানিয়েছেন কেন্দ্রের আইনজীবী। তিনি জানান, কেবল কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংঘাতের ক্ষেত্রেই সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মামলা করা যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। যা একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংস্থা। কেন্দ্রের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। সিবিআইয়ের তদন্তের ধরন বা এফআইআর করার সিদ্ধান্তে কেন্দ্র নাক গলায় না। তাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের আইনজীবীর আরও যুক্তি, যে যে ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্ত বা এফআইআরের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে রাজ্য সরকার, সেই তদন্ত সিবিআই শুরু করেছে কলকাতা হাই কোর্ট বা খোদ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন কেন হবে, সে প্রশ্ন তোলেন সলিসিটর জেনারেল।
রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল কেন্দ্রের আইনজীবীর বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, সিবিআই একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাকে তদন্ত করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকারই। কেন্দ্রের দেওয়া ক্ষমতাই প্রয়োগ করে সিবিআই। রাজ্য সরকারের মামলা কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই। কেন্দ্রীয় সংস্থার কাজের দায় কেন্দ্রীয় সরকার ঝেড়ে ফেলতে পারে না। রাজ্যের আইনজীবীর আরও যুক্তি, অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কোনও সংস্থা যদি কোনও মামলায় তদন্ত চালিয়ে যায়, ইচ্ছা মতো এফআইআর দায়ের করে, তবে তা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী হয়ে ওঠে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৩ নভেম্বর।