টুজি-র পর খনি দুর্নীতি মামলা, আরও চাপে সিবিআই প্রধান

টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতির অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে বসে বৈঠক করার অভিযোগ ওঠায় এমনিতেই চাপে ছিলেন সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিৎ সিনহা। এ বার কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির মামলাতেও চাপে পড়লেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে দাবি উঠল, খনি দুর্নীতির তদন্ত থেকে সিবিআই অধিকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হোক। সিবিআই প্রধানকে নিয়ে বিতর্কের শুরু তাঁর বাড়ির অতিথিদের নামধাম সংক্রান্ত রেজিস্টার নিয়ে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, টুজি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে বসে বৈঠক করেছেন সিবিআই অধিকর্তা। রেজিস্টারেই তার প্রমাণ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

রঞ্জিৎ সিনহা

টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতির অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে বসে বৈঠক করার অভিযোগ ওঠায় এমনিতেই চাপে ছিলেন সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিৎ সিনহা। এ বার কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির মামলাতেও চাপে পড়লেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে দাবি উঠল, খনি দুর্নীতির তদন্ত থেকে সিবিআই অধিকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হোক।

Advertisement

সিবিআই প্রধানকে নিয়ে বিতর্কের শুরু তাঁর বাড়ির অতিথিদের নামধাম সংক্রান্ত রেজিস্টার নিয়ে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, টুজি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের সঙ্গে বাড়িতে বসে বৈঠক করেছেন সিবিআই অধিকর্তা। রেজিস্টারেই তার প্রমাণ রয়েছে।

আজ আবার সর্বোচ্চ আদালতে অভিযোগ ওঠে, খনি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বিজয় দাদরা এবং তাঁর ছেলে দেবেন্দ্র দাদরার সঙ্গেও বহু বার নিজের বাড়িতে দেখা করেছিলেন সিনহা। এ ছাড়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন তিনি। সুবোধকান্তের ভাইয়ের সংস্থা বেআইনি কয়লা খনি বণ্টনে লাভবান হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিবিআই অধিকর্তা। জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালত চাইলে তিনি ওই দু’টি মামলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না। তবে যে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতেই পারেন তিনি। এই সব বৈঠক থেকে তিনি তদন্তের বিষয়ে অনেক রকম তথ্যও পেয়েও থাকেন। অনেকে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতেও আসেন। বস্তুত, টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অনিল অম্বানীর টেলিকম সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন বলে মেনেও নিয়েছেন সিনহা। তবে সাফ জানিয়েছেন, কাউকে তিনি অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দেননি। সিনহার কথায়, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কারা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে সেটাই আসল প্রশ্ন।”

কী ধরনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন সিনহা?

আশঙ্কার কেন্দ্রে সিবিআই অধিকর্তার বাড়ির অতিথিদের নাম সম্বলিত সেই রেজিস্টার। সেটি আজ মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দেন প্রশান্ত ভূষণ। সোমবার রেজিস্টারটি খতিয়ে দেখবে আদালত। ওই রেজিস্টারে থাকা বহু নাম ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিনহা আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন, যাতে ওই রেজিস্টারের তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত না হয়। আদালত তেমন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করতে রাজি হয়নি। প্রশ্ন হল, রেজিস্টারটি আইনজীবীর হাতে পৌঁছল কী করে?

সিনহার দাবি, এমন কোনও রেজিস্টার রয়েছে, সেটাই তাঁর জানা ছিল না। ২ নম্বর জনপথে তাঁর বাড়ির মূল ফটকের দায়িত্বে থাকে দিল্লি পুলিশ। সঙ্গে থাকেন ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের জওয়ানরা। সিবিআই অধিকর্তা জেড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা পান। তাই তাঁর গতিবিধি একটি ডায়রিতে নথিভুক্ত থাকে। অন্য ডায়রিতে দিল্লি পুলিশের কোন কনস্টেবল কখন সিবিআই-অধিকর্তার বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, সেই তথ্য থাকে। কিন্তু তা ছাড়াও তৃতীয় একটি ডায়রিতে তাঁর বাড়ির অতিথিদের নামধাম সংক্রান্ত তথ্য রেখে ‘নজরদারি’ চালানো হচ্ছে বলে সিনহার অভিযোগ।

যে সিবিআই অধিকর্তা দুর্নীতির তদন্তে নেমে সন্দেহভাজনদের উপর নজরদারি চালান, তাঁর উপরেই কারা নজরদারি চালাচ্ছিল? সিনহা নিজে কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে শত্রুতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, সিবিআইয়ের প্রাক্তন আইনজীবী ইউ ইউ ললিতকে চিঠি লিখে অনিল অম্বানীর সংস্থার বিরুদ্ধে নরম মনোভাব নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। সিনহার বক্তব্য, সংস্থার আইনজীবীকে চিঠি তিনি লিখেছেন ঠিকই। কিন্তু নরম মনোভাব নেওয়ার কোনও নির্দেশ দেননি।

সিনহার কথায়, “এখন টুজি স্পেকট্রাম মামলার শুনানি চলছে। কয়লা খনি তদন্তে আমার নজরদারি নিয়েও আদালতে আবেদন জমা পড়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই আমি কোনও ভুল করিনি। কিন্তু আদালত চাইলে আমি এই দু’টি মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে তৈরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement