নীতীশ মন্ত্রিসভার নয়া সদস্যেরা। ছবি: পিটিআই।
নীতীশ কুমার আগেই ‘পথ’ দেখিয়েছিলেন। এ বার সেই স্রোতে সামিল হল বিজেপি-ও। ফলে সোমবার বিকেলে পটনার রাজভবনে শপথে দেখা গেল অনগ্রসর-দলিত ‘অঙ্ক’। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ-সহ ১৫ দলের মন্ত্রিসভায় পিছড়ে বর্গের প্রতিনিধি দুই তৃতীয়াংশ। ব্রাহ্মণ-ভূমিহার-রাজপুত মিলিয়ে উচ্চবর্ণের (সবর্ণ) মুখ ৫।
ঘটনাচক্রে, এ বারের বিধানসভা ভোটে উচ্চবর্ণের ভোটারদের নিরঙ্কুশ সমর্থনের জোরেই নীতীশের জেডি(ইউ)-কে পিছনে ফেলে এনডিএ জোটের প্রধান দল হয়েছে বিজেপি। ব্রাহ্মণ-ভূমিহার-রাজপুত ভোটদাতারা মুখ ফেরানোয় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কংগ্রেস।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ নিজে অনগ্রসর (ওবিসি) কুর্মি গোষ্ঠীর। তাঁর মন্ত্রিসভার দুই বিজেপি উপমু্খ্যমন্ত্রীর মধ্যে তারকিশোর প্রসাদ জাতিতে বানিয়া (বৈশ্য)। বিহারে বৈশ্যদের কয়েকটি গোষ্ঠী অনগ্রসর তালিকাভুক্ত। তারকিশোরের ‘কালোয়ার’ গোষ্ঠী তার মধ্যে পড়ে।
বিজেপির আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবী অতি-অনগ্রসর (ইবিসি) জাতির। কয়েক বছর আগে অনগ্রসর রাজনীতিতে লালুপ্রসাদের প্রাধান্য খর্ব করতে কয়েকটি অ-যাদব ওবিসি গোষ্ঠীকে সরকারি ভাবে ইবিসি-র মর্যাদা দিয়ে পৃথক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন নীতীশ। ভোটের ফল বলছে ইবিসি শ্রেণির বিপুল সমর্থন পেয়েছে এনডিএ জোট। নয়া নীতীশ মন্ত্রিসভার সদস্য তথা বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুকেশ সহনীও এই শ্রেণির প্রতিনিধি।
আরও পড়ুন: করোনা টিকার তথ্য হাতাতে সাইবার হানা, জানাল মাইক্রোসফ্ট
একই ভাবে বিহারের দলিত রাজনীতিতে রামবিলাস পাসোয়ানের প্রভাব কমাতে অ-পাসোয়ান কয়েকটি দলিত গোষ্ঠীকে ‘মহাদলিত’ শ্রেণিভুক্ত করে নীতীশ বাড়তি সুবিধা দিয়েছিলেন। এ বার জেডি(ইউ)-র তরফে মন্ত্রী হয়েছেন মহাদলিত নেতা অশোক চৌধুরী। সহযোগী দল হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম)-এর মন্ত্রী সন্তোষ মাঁঝীও মহাদলিত। সন্তোষ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝীর ছেলে।
এ দিন শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে বিজেপির রামসূরত রায়, রামপ্রীত পাসোয়ান জেডি(ইউ)-র শীলা কুমারী, বিজেন্দ্র যাদবের মতো অনগ্রসর এবং দলিত প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সূত্রের খবর, নয়া বিধানসভার স্পিকার হতে পারেন বিজেপির নন্দকিশোর যাদব। তিনিও অনগ্রসর জাতির।
আরও পড়ুন: মাকে ধর্ষণের পর খুন! কর্নাটকে গ্রেফতার তরুণ
বিজেপির ৭ মন্ত্রীর মধ্যে মঙ্গল পাণ্ডে, অমরেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ এবং জীবেশ মিশ্র সবর্ণ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। মঙ্গল ব্রাহ্মণ, অমরেন্দ্র রাজপুত এবং জীবেশ ভূমিহার জাতিভুক্ত। বিদায়ী স্পিকার তথা এ দিন মন্ত্রিত্বে শপথ নেওয়া বিজয় চৌধুরীও ভূমিহার। বিহার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মেওয়ালাল চৌধুরীও এ দিন মন্ত্রী হয়েছেন। বছর তিনেক আগে এই দুর্নীতিতে নাম উঠে আসার পরে তৎকালীন জেডি(ইউ) বিধায়ক মেওয়ালালকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছিলেন নীতীশই।
কংগ্রেসের জমানায় বেশিরভাগ সময়ই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শ্রীকৃষ্ণ সিংহ, বিনোদানন্দ ঝা, হরিহর সিংহ, ভগবৎ ঝা আজাদের মতো উচ্চবর্ণের নেতারা বারবার প্রাধান্য পেয়েছেন। ১৯৯০ সালের বিধানসভা ভোটে জগন্নাথ মিশ্রের কংগ্রেস সরকারকে সরিয়ে অনগ্রসর লালুপ্রসাদ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মগধভূমে সবর্ণ প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকে। এ বারেও বজায় রইল সেই ধারাই।