প্রথম বার যখন বাড়িতে বলেছিলেন তিনি বিমান চালাবেন, ভয়ে মা কেঁদে ফেলেছিলেন। তার পর ধীরে ধীরে মেয়ের স্বপ্নের শরিক হন আগরওয়াল দম্পতি। তাঁদের একমাত্র মেয়ে জোয়ার স্বপ্নের উড়ান এ বার ডানা মেলবে উত্তর মেরুর উপর দিয়ে।
সান ফ্রান্সিসকো থেকে উত্তর মেরু পেরিয়ে বেঙ্গালুরুর মাটি ছোঁবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের চাকা। পাড়ি দেবে ১৪ হাজার কিলোমিটার। পৃথিবীর দীর্ঘতম এই আকাশপথ পাড়ির কারিগর এক প্রমীলাবাহিনী। তাঁদের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন জোয়া আগরওয়াল।
ককপিটে জোয়ার পাশে থাকবেন ক্যাপ্টেন থান্মাই পাপাগড়ী, আকাঙ্ক্ষা সোনাওয়ানে এবং শিবানী মানহাস।
সংবাদমাধ্যমকে ক্যাপ্টেন জোয়া জানিয়েছেন, এটা তাঁদের বহু দিনের স্বপ্ন। গত বছরই এই উড়ানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে বিশ্বে উড়ান-ইতিহাসে মাইলফলক বসবে ১১ জানুয়ারি, ২০২১। উড়ানে সময় লাগবে ১৭ ঘণ্টা।
মেরু-উড়ান এর আগেও হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম মেরু পাড়ি দেওয়া উড়ানের সম্পূর্ণ দায়িত্বে আছেন মেয়েরা। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি থেকে ভারতের সিলিকন ভ্যালিকে জুড়বেন তাঁরা।
কতজন উত্তর মেরু দেখেছেন? নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন ক্যাপ্টেন জোয়া। তাঁর কথায়, আকাশপথে অতলান্তিক এবং প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার থেকেও মেরু পেরিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত থেকে যাওয়া সম্পূর্ণ অন্য অভিজ্ঞতা। তার অংশ হতে পারবেন বলে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন।
তিনি যখন এই পেশায় পা রেখেছিলেন, তখন এয়ার ইন্ডিয়ায় মহিলা পাইলটের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। সকলে তাঁকে নবীন হিসেবে দেখতেন ঠিকই। কিন্তু সহকর্মীদের কাছে কোনওদিন উপহাসের পাত্রী হননি।
পুরুষপ্রধান এই পেশায় নিজেকে প্রমাণ করতে হয় ঠিকই। কিন্তু একজন দক্ষ পাইলট হিসেবেই। ‘মহিলা পাইলট’ হিসেবে নয়। উপলব্ধি জোয়ার।
৮ বছর জোয়া এয়ার ইন্ডিয়ায় আছেন একজন ফ্লায়িং কম্যান্ডান্ট হিসেবে। ২০১৩ সালে উন্নীত হন ক্যাপ্টেন পদে। সে বারও তাঁর মা কেঁদেছিলেন। তবে এ বার আর ভয়ে নয়, আনন্দে।
এই ঐতিহাসিক উড়ানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বোয়িং ৭৭৭-২০০এলআর। বিমানে আসনসংখ্যা ২৩৮। প্রত্যেকটি আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই।
বোয়িং ৭৭৭ এয়ারক্র্যাফ্ট গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চালিয়ে ২৫০০ ঘণ্টা আকাশে কাটিয়েছেন ক্যাপ্টেন জোয়া। এ ছাড়া পাইলট হিসেবে তাঁর কেরিয়ারে এখনও অবধি মোট ৮ হাজার ঘণ্টা আকাশে কাটিয়েছেন তিনি।
পৃথিবীর উড়ান ইতিহাসে জোয়া প্রথম মহিলা কম্যান্ডার হিসেবে উত্তর মেরুর উপর দিয়ে বিমান চালাবেন। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান জোয়া এই মুহূর্তে বিশ্বে বোয়িং ৭৭৭-এর কনিষ্ঠতম মহিলা কম্যান্ডার। সে দিক থেকেও ইতিহাস গড়বেন তিনি।
ইতিহাসের বিরল অধ্যায়ের অংশ হতে চলা জোয়া চান, তাঁর মতো আরও অনেকে এই পেশায় পা রাখুক। তাঁর বিশ্বাস, মেয়েদের সুযোগ দিলে, কাচের দেওয়াল ভেঙে আকাশ ছুঁয়ে ফেলা তাঁদের কাছে কঠিন নয়।