বাড়িতে তাঁর অপেক্ষায় পাঁচ বছরের ছেলে। কিন্তু মায়ের যে চিন্তা আরও অনেক ‘মা’কে ঘিরে। যাঁদের সন্তানরা আটকে রয়েছেন করোনাধ্বস্ত ইটালিতে। তাঁদের কথা ভেবে তাই সব বিপদ তুচ্ছ করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দিল্লি থেকে রোম আকাশপথে পাড়িয়ে দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্বাতী রাওয়াল।
কাজের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার এই শিক্ষা স্বাতী পেয়েছিলেন তাঁর বাবা এস ডি রাওয়ালের কাছ থেকে। বন দফতরের এই আধিকারিকও সব কিছু তুচ্ছ করে বরাবর অবিচল থেকেছেন নিজের কর্তব্যের প্রতি।
রাওয়াল পরিবার আদতে গুজরাতের ভাবনগরের। তবে স্বাতী বর্তমানে কাজের সূত্রে থাকেন দিল্লিতে। ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল এয়ারফোর্সের পাইলট হবেন। কিন্তু তখন মহিলাদের বায়ুসেনার পাইলট হওয়ার অনুমতি ছিল না।
তাই বাধ্য হয়ে স্বাতী চলে আসেন বাণিজ্যিক উড়ানের ক্ষেত্রে। রায়বরেলী থেকে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০০৬ সালে যোগ দেন এয়ার ইন্ডিয়ায়। ২০ মার্চ তাঁর কাছে ফোন আসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। জানতে চাওয়া হয়, তিনি রোমে যেতে পারবেন কি না?
‘হ্যাঁ’ বলতে এক মুহূর্তও ভাবেননি স্বাতী। ২২ জন ক্রু সমেত বোয়িং ৭৭৭ নিয়ে তিনি উড়ে যান রোমের পথে। অতিমারি-বিপর্যস্ত রোম থেকে ২৬৩ জন ভারতীয়কে নিয়ে দেশে ফেরেন ক্যাপ্টেন স্বাতী রাওয়াল এবং ক্যাপ্টেন রাজা চহ্বন।
রেসকিউ মিশনে যাঁদের নিয়ে তাঁরা ইতালি থেকে ২২ মার্চ ভারতের মাটি স্পর্শ করেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ছাত্রছাত্রী। তবে শুধু রোম নয়। করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র চিনের উহান-সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধার করেছে এয়ার ইন্ডিয়া।
ক্যাপ্টেন স্বাতী রাওয়ালের কাজ প্রশংসিত হয় সমাজের সব স্তরে। স্বাতী-সহ এয়ার ইন্ডিয়ার রেসকিউ টিমকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
স্বাতী এবং তাঁর টিমকে শুভেচ্ছা-টুইট করেছিলেন অসামরিক উড়ান মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীও।
গর্বিত স্বাতীর পরিবারও। স্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে টুইট করেন স্বাতীর স্বামী অজিতকুমার ভরদ্বাজ।
এর আগে স্বাতী নিজে টুইটারে সক্রিয় ছিলেন না। কিন্তু শুভেচ্ছাস্রোতের উত্তর দিতে তিনি নিজেও টুইট করেন। ধন্যবাদ জানান দলের বাকি সদস্যদের।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ মিশনে এর আগেও সামিল হয়েছেন স্বাতী। ২০১০ সালে শুধু মহিলা কর্মীদের নিয়ে মুম্বই থেকে নিউ ইয়র্ক পাড়ি দেওয়া উড়ানের অংশও ছিলেন তিনি।
জীবনের প্রতি মেয়ের নির্ভীক দৃষ্টিভঙ্গিতে খুশি স্বাতীর বাবা এস ডি রাওয়াল। তিনি নিশ্চিত, এ রকম সুযোগ এলেও তাঁর কন্যা কর্তব্যের আকাশে আবার স্বাতী নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠবেন।