মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা গোপাল ভার্গব। —ফাইল চিত্র
বিজেপির ‘দাক্ষিণাত্য’ অভিযানের পর থেকেই রাজনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন, কর্ণাটকের পর নিশানায় কোন রাজ্য? কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও ইঙ্গিত না দিলেও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা এমন এক মন্তব্য করলেন, যাতে সেই প্রশ্নের উত্তরের কিছুটা আঁচ মিলল।তবে কি এ বার বিজেপির মিশন মধ্যপ্রদেশ? মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথকে বিজেপি নেতা গোপাল ভার্গবের হুমকি, ‘‘উপর মহল থেকে নির্দেশ এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার সরকার ফেলে দেব।’’ যদিও দেরি না করে কমল নাথের পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘হিম্মত থাকলে অনাস্থা প্রস্তাব আনুন।’’
বুধবারই কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের পতন হয়েছে। আস্থা ভোটে হেরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে বিজেপি। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিজেপি নেতার এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। গোপাল ভার্গব মধ্যপ্রদেশের রেহলি কেন্দ্রে ১৯৯৫ সাল থেকে টানা আট বারের বিধায়ক। কমল নাথের নেতৃত্বে কংগ্রেস জোট সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মন্ত্রী ছিলেন এই ভার্গব। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে এবং দলেও ধারে ভারে তাঁর মন্তব্যের যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে।
ঠিক কী বলেছেন গোপাল ভার্গব? কমল নাথকে উদ্দেশ্য করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দলের এক বা দু’নম্বর শীর্ষ নেতা এক বার নির্দেশ দিলেই আপনার সরকার টিকবে না।’’ পরে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভার্গব বলেছেন, ‘‘কর্ণাটকের চেয়েও খারাপ অবস্থায় মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার টিকে আছে। কোনও নীতি বা আদর্শের উপর ভিত্তি করে নয়, শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভেই কংগ্রেসের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টি (এসপি), বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এবং নির্দল বিধায়করা জোট করেছেন।’’
ভার্গব এক নম্বর এবং দু’নম্বর বলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কথাই বলতে চেয়েছেন। বর্ষীয়ান কমল নাথও এই দু’জনকে কটাক্ষ করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, ‘‘আপনাদের নম্বর ওয়ান এবং নম্বর টু খুবই স্পর্শকাতর। তাই এখনও পর্যন্ত এই রকম কোনও নির্দেশ দেননি। আপনি নিজেই অনাস্থা আনতে পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই।’’
আরও পডু়ন: বন্ধ হোক ধর্মের নামে গণপিটুনি, মুক্ত চিন্তার পক্ষে সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রীকে পত্রাঘাত বিদ্বজ্জনদের
২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। তাতে কংগ্রেস ১১৪টি আসন পায়। ম্যাজিক ফিগার ১১৬। বিজেপির দখলে যায় ১০৯টি আসন। নির্দলের চার জন, বিএসপির ২ জন এবং এসপি-র এক বিধায়কের সমর্থনে ম্যাজিক ফিগারের থেকে মাত্র ছ’টি বেশি আসন (১২১) নিয়ে বিজেপিকে সরিয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমল নাথ।
এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে মাত্র ছ’টি আসন বেশি পাওয়ার বিষয়টিই এ দিন বার বার টেনে এনেছেন ভার্গব। তিনি বলেছেন, শরিকদের চাহিদা যখনই মিটবে না, সরকার (মধ্যপ্রদেশ) পড়ে যাবে। কী ভাবে যে এই জোট সরকার সাত মাস টিকে আছে, সেটাই আশ্চর্যের।’’ তা হলে কি মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করতে প্রস্তুত বিজেপি? উত্তরে ভার্গব বলেন, ‘‘সরকার গঠনের জন্য আমরা অত্যুৎসাহী নই। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই এগোব।’’
আরও পড়ুন: কর্নাটকে সরকার গড়ার প্রস্তুতি বিজেপির, চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে ইয়েদুরাপ্পা
কংগ্রেস এবং জেডিএস নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, ক্ষমতা দখলের লোভে বিজেপি তাঁদের দলের বিধায়কদের মোটা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভার্গবের দাবি, প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজ্য থেকে খবর আসছে বিধায়করা আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। বিজেপিতে এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে প্রায় সব দলের নেতারাই আকৃষ্ট হচ্ছেন। মধ্যপ্রদেশেও সেটা হলে আমাদের কী করার আছে?’’
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হয় ডিসেম্বরে হওয়া মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ের নির্বাচন। এই তিন রাজ্যেই বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। এ বার তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশ থেকে বিজেপি নেতার এই রকম দাবিতে ফের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।