অসমে ধূলা থানা চত্বরে রাজস্থানের অতিথিরা। নিজস্ব চিত্র
উট কি কাঁটা বেছে খায়— প্রশ্ন ছিল লালমোহনবাবুর। না, ফেলু মিত্তিরের মুখে তার জবাব জুগিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু মরুভূমির রুক্ষশুষ্ক জলহাওয়া, সেখানকার সেই কাঁটাওয়ালা গাছ না-পেলে তাদের কী হাল হয়, সেটা বেশ মালুম হচ্ছে অসম পুলিশের।
রাজস্থানের ছয় অতিথিকে শান্ত-সুস্থ রাখতে নাজেহাল এখন মরিগাঁও জেলার ধূলা থানার পুলিশ। গরু-ছাগল দেখভালের ব্যাপারে সাধারণ কিছু জ্ঞানগম্যি রয়েছে এই কনস্টেবল, এসআইদের। সে ভাবেই চলছিল এই অতিথিদের খাতিরদারি। তা বলে ক্যাকটাসের বদলে কাঁঠাল পাতা তাদের রুচবে কেন! অসমের ভেজা জলহাওয়া, সবুজে ঘেরা পরিবেশে গরু-ছাগলের মতো বেঁচে থাকতে গিয়ে বেজায় মুষড়ে পড়েছে অবোলা প্রাণীগুলি। এ দিকে তাদের হেফাজত নিয়ে মতান্তরের জল গড়িয়েছে আদালতে।
তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিজভূমে ফেরার রাস্তাও বন্ধ।
ইদের আগের দিন ১১ অগস্ট স্থানীয় হাটে বিক্রির জন্য আনা ৫টি উট আটক করে ধূলা থানার পুলিশ পড়েছে মহা সমস্যায়। এমনই আরও একটি উট বাজেয়াপ্ত করেছে মঙ্গলদৈ থানাও। সন্দেহজনক নাগরিক আর ডি-ভোটার নিয়ে এমনিতেই বেজায় ব্যস্ততা অসম পুলিশের। মরিগাঁও জেলায় এই সমস্যা তুলনায় বেশি। কিন্তু তদন্তের কাজ, এলাকা টহল মাথায় উঠেছে ধূলা থানার পুলিশের।
উট ব্যবসায়ী সামাতুল্লাহ উটগুলির হেফাজত চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। দরং জেলার নিম্ন আদালত সেই অনুমতিও দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ উটগুলিকে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়ার অনুমতি চেয়ে পাল্টা আবেদন জানিয়েছে। তাদের দাবি, রাজস্থানের প্রাণীগুলি অসমের আবহাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছে। বোর্ড তাদের রাজস্থানে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুক। বুধবার দরং জেলা আদালত নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করেছে।
এ দিকে থানার চত্বরে থাকতে থাকতে উটগুলির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। কোনও উটের ক্ষতি হলে বিপদ বাড়বে পুলিশেরই। এসপি অমৃত ভুঁইয়া জানাচ্ছেন, গরু-ছাগলের মতো দেখভাল করায় উটেরা ক্রমেই ঝিমিয়ে পড়ছে দেখে শেষমেশ পশু চিকিৎসককে ডেকে দেখানো হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে পরামর্শ।
হেফাজতের প্রশ্নটি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া কত দিন চলবে ঠিক নেই। পিঠে কুঁজওয়ালা লম্বা গলার ৬টি প্রাণীর আপাতত দিন কাটছে জাবর কেটে, বেজার মুখে। অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডের আশা, আদালত শীঘ্রই রায় দেবে এবং তারাও বলতে পারবে, ‘উট উঠ’। ফিরবে নিজভূমে।