প্রতীকী ছবি
রক্ষণশীলতার গণ্ডি ভেঙে সাবিত্রীবাই ফুলের প্রদেশে এ বার বৈধব্য প্রথা পালনে নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্যোগ নেওয়া হল। এ জন্য রাজ্যের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতকে আহ্বান জানালেন মহারাষ্ট্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হাসান মুশরিফ। এ ক্ষেত্রে তিনি কোলাপুরের হেরওয়াড় গ্রামের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। গত মঙ্গলবারই গ্রামোন্নয়ন দফতরে এই বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। তার পরেই দফতরের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
এই সার্কুলার কার্যকর করার জন্য জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যকরী অফিসারকে (সিইও) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্কুলার অমান্য করলে এখনই কোনও শাস্তির সংস্থান করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এই কাজে সিইও-কে সাহায্য করবেন তাঁর অধীনস্থ সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মকর্তা।
মন্ত্রী মুশরিফ জানিয়েছেন, কোলাপুরের হেরওয়াড় গ্রাম পঞ্চায়েত বৈধব্য প্রথায় নিষেধাজ্ঞার জন্য একটি রেজ়োলিউশন পাশ করেছে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত অন্যদেরও। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে এ ধরনের প্রথার কোনও স্থান নেই।’’ প্রসঙ্গত, হেরওয়াড় গ্রাম পঞ্চায়েতে গত ৪ মে এই প্রস্তাব পাশ হয়। যেখানে বলা হয়, স্বামীর মৃত্যুর পরে মহিলাদের সিঁদুর মুছে ফেলা, মঙ্গলসূত্র খুলে রাতে বাধ্য করানোর বিরোধিতা করা হচ্ছে। হেরওয়াড়ের দেখাদেখি কোলাপুরের আর এক গ্রাম মনগাঁও-তেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
হেরওয়াড় গ্রামের সরপঞ্চ সুরগোন্ডা পাটিল জানিয়েছেন, করমালা তহশিলে মহাত্মা ফুলে সমাজ সেবা মণ্ডলের অধ্যক্ষ প্রমোদ জিঞ্জারে বলেছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে মহিলাদের যে প্রথা অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়, তা যথেষ্ট অপমানজনক। তার পরেই এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈধব্য প্রথার নিষ্ঠুরতা ছুঁয়ে গিয়েছিল সরপঞ্চকেও। তিনি বলেন, ‘‘করোনার প্রথম ঢেউয়ে আমার এক বন্ধু মারা যান। ওঁর শেষকৃত্যের সময়ে দেখি, কী ভাবে তাঁর স্ত্রীকে চুড়ি ভাঙতে, সিঁদুর মুছতে এবং মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে প্রিয়জন হারানো মহিলাদের দুঃখ আরও বেড়ে যায়।’’
জিঞ্জারে জানিয়েছেন, এই প্রথা বিলোপের জন্য তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণা করছি, আমার মৃত্যুর পরে স্ত্রীকে বৈধব্য প্রথা মানতে বাধ্য করা যাবে না।’’ স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্বামীহারাদের অনেকেই এতে সদর্থক সাড়া দেন। এর পরেই গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়, এই রক্ষণশীল প্রথা নির্মূল করতে প্রস্তাব পাশ করা হবে।
এর পরেই রাজ্য সরকারের তরফেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নয়া সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রথা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল। মহিলাদের মর্যাদারও পরিপন্থী। তাই অবিলম্বে এই প্রথার অবসান প্রয়োজন।
এই উদ্যোগের প্রশংসা জানিয়েছেন শিবসেনা মুখপাত্র মনীষা কায়ান্ডে। তাঁর বক্তব্য, এমন সিদ্ধান্ত মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাজা রামমোহন রায়, মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে, সাবিত্রীবাই ফুলেরা যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, সামাজিক সংস্কারের সেই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।
মুশরিফের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এনসিপি সাংসদ তথা শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলেও। শাসক জোটের আর এক সদস্য কংগ্রেসের তরফে স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী বর্ষা গায়কোয়াড় এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী যশোমতি ঠাকুরও বৈধব্য রীতির অবসানের উদ্যোগকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
মহিলা সমাজকর্মী তৃপ্তি দেশাই জানিয়েছেন, বহু বছর ধরেই মহিলাদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন। রক্ষণশীল প্রথার জেরে মহিলারা প্রচুর বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হন। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রাচীন প্রথার অবসানে মহিলাদের মধ্যে সদর্থক পরিবর্তন আসবে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের কাছে তৃপ্তি আবেদন জানান, মহিলাদের স্বার্থে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করার জন্য, যাতে মহিলারা উপকৃত হন।