কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বঞ্চনা, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব, সংবিধান বিরোধী— এমন হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। সেই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে সরকার পক্ষেরও চেষ্টার ত্রুটি নেই। নানা পরিসংখ্যান, নানা উদাহরণ তুলে ধরে প্রমাণের চেষ্টা চলছে, এই আইনে কোনও সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে তৈরি হয়নি। কিন্তু তেমনই উদাহরণ দিতে গিয়ে বিপত্তি বাধালেন নির্মলা সীতারামন। নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আদনান সামি ও তসলিমা নাসরিনকে এক বন্ধনীতে বসিয়ে ফেললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী এই দাবি করলেও ঘটনা হল, জন্মসূত্রে পাকিস্তানি গায়ক আদনানকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তা দেওয়া হয়নি। তাঁকে শুধুমাত্র তাঁকে ভারতে বসবাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সীতারামনের মন্তব্যে অস্বস্তিতে বিজেপি।
রবিবার চেন্নাইয়ে সিএএ নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন নির্মলা সীতারামন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বিদেশিদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য-পরিংসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ থেকে ’১৮ এই দু’বছরে আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা ৩৯১ জন মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে ১৫৯৫ জনকে। এই সময়ের মধ্যেই আদনান সামিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা একটা উদাহরণ। অন্য উদাহরণ তসলিমা নাসরিনকে নাগরিকত্ব দেওয়া। এটাই প্রমাণ করে আমাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে।’’
আরও পডু়ন: ভারতে বোমা ফেলেছিলেন, তাঁর ছেলে আদনান সামিকে নাগরিকত্ব দিয়েছেন! সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব রাজা মুরাদ
তসলিমা নাসরিন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁর লেখালেখি ও উপন্যাসে ‘মুসলিম-বিরোধী’ মতবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মৌলবাদীরা তাঁর প্রাণনাশের হুমকি দেন। ফলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তসলিমা। ‘নির্বাসিত’ তসলিমা সুইডেনের নাগরিকত্ব পান। পরে ভারতে বসবাসের আবেদন করেন। সেই আর্জি মঞ্জুর করে ২০০৪ সালে তাঁকে শুধুমাত্র ভারতে বসবাসের অনুমতি দেয় কেন্দ্র। নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। অথচ নির্মলা সীতারামন এ দিন সেই দাবিই করেছেন।
অন্য দিকে জন্মসূত্রে পাকিস্তানের নাগরিক সঙ্গীতশিল্পী আদনান সামিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে আবেদন জানিয়েছিলেন, মানবিক কারণে তাঁকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদনান সামিকে ‘সিটিজেনশিপ বাই ন্যাচারালাইজেশন’ অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: সিএএ: শীতের রাতে প্রতিবাদীদের কম্বল কেড়ে নিল যোগীর পুলিশ
সীতারামন এ দিন আরও পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, গত ছ’বছরে ২৮৩৮ জন পাকিস্তানি, ৯১৪ জন আফগানিস্তানি এবং ১৭২ জন বাংলাদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চার লক্ষেরও বেশি শ্রীলঙ্কান তামিল শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিয়েছে ভারত।
সিএএ ‘অসাংবিধানিক’ বলে নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। অনেক রাজ্যই জানিয়েছে, তারা সিএএ চালু করবেন না। আবার কেরল ও পঞ্জাব বিধানসভায় সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটি রাজ্য বিধানসভায় সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব পাশ করেছে। এটা রাজনৈতিক মন্তব্য করার শামিল। আমরা সেটা বুঝি। কিন্তু যখন তাঁরা এটা বলছেন যে সিএএ কার্যকর করবেন না, সেটা আইন-বিরোধী। এটা অসাংবিধানিক।’’