জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রতিবাদ। ছবি: রয়টার্স।
দিল্লির জামা মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে তাঁর হাতে গীতা বা কোরান নয়। রয়েছে ভারতের সংবিধান।
‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ ছবির সাউন্ড ডিজাইনের জন্য অস্কার-জয়ী রেসুল পুকুট্টি-র কথায়, ‘‘এটাই আমার কাছে বদলে যাওয়া ভারতের সব থেকে আশা জাগানো ছবি।’’
বিরোধীদের কিন্তু অভিযোগ, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদকে বিজেপি শুধুই মুসলিমদের বিক্ষোভ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
বেছে বেছে মুসলিম বিক্ষোভকারীদের ক্ষেত্রে দিল্লি তথা বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ কঠোর দমননীতি নিচ্ছে। প্রথমে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হওয়া, গত কাল পুরনো দিল্লির দরিয়াগঞ্জে শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠি চালানো তারই নমুনা বলে বিরোধীদের দাবি। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মিছিল যখন দরিয়াগঞ্জের গলিতে, পুলিশ পিছন থেকে হঠাৎ তাড়া করে এসে লাঠি চালায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, কারা হিংসা করছেন, তা পোশাক দেখেই চেনা যাচ্ছে। এ ভাবে বিশেষ সম্প্রদায়কে তিনি ইঙ্গিত করলেন কেন, সে প্রশ্ন তখনই উঠেছিল। বিজেপি নেতৃত্ব নিয়মিত ভাবে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে ‘মুসলিম অভ্যুত্থান’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই আইনের পক্ষে যে ১১০১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি আজ বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম স্বপন দাশগুপ্ত টুইটারে যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে এই অশান্তি রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ার বিরুদ্ধে মুসলিমদের অভ্যুত্থান। নাগরিকত্বের বিষয়টি তাতে সুবিধা মতো যোগ করে নেওয়া হয়েছে।’’
সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘বিজেপি প্রথম থেকেই এই প্রতিবাদকে ধর্মীয় চেহারা দিতে চাইছে। যাতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণে সুবিধা হয়।
বাস্তব হল, সাধারণ মানুষ থেকে ছাত্রছাত্রী ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সংবিধানের পক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছেন।’’
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও আজ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘এনআরসি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন দেশের গরিব মানুষের বিরুদ্ধে। সংবিধানের মূল আত্মার বিরুদ্ধে। মানুষ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে সংবিধানের পক্ষে লড়ছেন। কিন্তু সরকার বর্বর দমন ও হিংসার নীতি নিচ্ছে।’’ নীলোৎপলের যুক্তি, শুধুমাত্র বিজেপি শাসিত রাজ্যেই পুলিশ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন নীতি নিচ্ছে। দিল্লি পুলিশও কেন্দ্রের অধীন। তাই রাজধানীতেও একই ছবি।
আরও পড়ুন:‘পোশাক’ বেছেই কি পুলিশের লাঠি
গত কাল দরিয়াগঞ্জ ও সীমাপুরীতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। দরিয়াগঞ্জে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নাবালকদেরও আটক করে রাখা হয়। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত দরিয়াগঞ্জ বা সীমাপুরী থানায় কোনও আইনজীবীকে ঢুকে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টায় সেন্ট্রাল দিল্লির চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আইনজীবীদের আর্জি শুনে পুলিশকে নির্দেশ দেন, নাবালকদের ছেড়ে দিতে হবে। আটক অভিযুক্তদের সঙ্গে আইনজীবীদের দেখা করতে দিতে হবে। ভোর সাড়ে চারটেয় সীমাপুরী থানার পুলিশকে একই নির্দেশ দেন কারকারডুমার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
আজ ভোররাতে নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছিলেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। দরিয়াগঞ্জ ও সীমাপুরী থানায় ধৃতদেরও জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজাদকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার আগে তিস হাজারি আদালতের বিচারক শুনানির সময়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিধিনিষেধ জারি করেন।
আজও জামিয়া ও ইন্ডিয়া গেটের সামনে প্রতিবাদ হয়। তা শান্তিপূর্ণ ছিল। পরে রাতেও রাতেও প্রচুর ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হন দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে।