ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের জন্য় অর্থবরাদ্দে অনুমোদন দিল
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এ সবুজ সঙ্কেত দিল কেন্দ্র। এনপিআর-এর তথ্য আপডেট করার জন্য বাজেট বরাদ্দে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। অসম বাদে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনপিআর-এর কাজ চলবে বলে জানিয়েছে জাতীয় জনগণনা কমিশন।
নানা মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, এ বার এনপিআর-এ বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন, এনপিআর-এ বায়োমেট্রিকের প্রয়োজন নেই। আগের মতোই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। তার জন্য কোনও পরিচয়পত্র বা নথি দিতে হয় না। সিএএ-এনআরসি নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে এনপিআর নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কাতেই মন্ত্রীর ঘোষণা, এনপিআরএর জন্য কোনও নথি দিতে হবে না সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এনপিআর-এর জন্য ৩৯৪১ কোটি এবং জনগণনার জন্য ৮৭৫০ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট প্রায় ১৩০০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল আগেই এনপিআর-এর কাজ স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছে। নিজেদের রাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছে একাধিক রাজ্য। তার মধ্যেই এনপিআর-এর এই সিদ্ধান্তের জেরে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলির সঙ্ঘাত আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
১০ বছর অন্তর দেশে জনগণনা হয়। তার আগে সরকারের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাগরিকদের পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে তার জন্য কোনও পরিচয়পত্র বা নথির প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র মৌখিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় এনপিআর। ২০১১ সালে জনগণনার আগে ২০১০ সালে প্রথম এনপিআর-তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার পর ২০১৫ সালে ফের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছে জনগণনা কমিশন। এ বার ২০২১ সালের জনগণনার আগে আগামী বছরের এনপিআর তথ্য আপডেট করার জন্য মঙ্গলবার অর্থবরাদ্দে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
কিন্তু সিএএ-এনআরসি নিয়ে বর্তমানে যে আবহ, তাতে সেই কাজ কতটা সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমস্ত জেলা প্রশাসন ও পুরসভাকে এনপিআর-এর কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সেই কাজ শুরু করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। কেরলের বাম সরকারও প্রায় একই রকম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, সিএএ-এনআরসি নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বন্ধ রাখা হচ্ছে এনপিআর-এর কাজ। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনারাই বিজয়ন ছাড়াও সিএএ-এনআরসি রাজ্যে কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছেন পঞ্জাব, বিহার, অন্ধ্রের মতো একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।
অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শেষ হয়েছে। তাই সে রাজ্যে আলাদা করে এনপিআর-এর কাজ হবে না বলে জানিয়েছে জনগণনা কমিশন।