জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
পরিচয় কী?আমি কে?ও কে?তিনি কে?ওরা কারা?ওরাই বা কারা?
দিনভর জয়পুর উত্তাল রইল এমনই নানা প্রশ্ন নিয়ে। কখনও নিজের পরিচয়ের খোঁজ, কখনও অন্যকে দেখার চোখ নিয়ে মতান্তরে। চলল কথাবার্তা, বিতর্ক। কাকে কী ভাবে দেখলে ভাল দেখায়? কাকে কেমন করে চুপ করে থাকতে বললে সুবিধে হয়? কাকে জনতার নজর থেকে একেবারে সরিয়ে রাখলে ভাল হয়?
দেশজুড়ে যখন পরিচয়পত্রের গুরুত্ব নিয়ে বিতর্ক, ১৩তম জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল প্রাঙ্গন তখন উত্তাল তো থাকবেই এ বিষয় নিয়ে। দেশ-বিদেশের সাহিত্যিকেরাও সে বিতর্ককে দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করলেন। বৃহত্তর সমাজ কোথায় যেন একাত্ম বোধ করল উত্তেজিত এই দেশের নানা সমস্যার সঙ্গে।
আরও পড়ুন: নির্ভয়াকাণ্ড: তিহাড় জেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ফের আদালতে দণ্ডিতদের আইনজীবী
সকালটা শুরু হয়েছিল নিজেকে দেখানোর রাজনীতি ঘিরে। স্মৃতিচারণ কী ভাবে রাজনৈতিক, কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে কথার পিঠে কথা গড়াল অনেক দূর। কে স্মৃতিচারণ করলে তাঁকে বিশ্বাস করা যায়, স্মৃতিচারণ কি আসলে ফিকশন, এমন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা গড়াল। নিকোলাস কোলরিজ, অভি শালিমের মতো স্মৃতিচর্চার বিশেষজ্ঞেরা হাসলেন নিজেদের উপরেই। প্রকাশক চিকি সরকারের সঙ্গে আড্ডায় জানালেন, মনে রাখা আর মনে কথা বলা কি আর এক? কত জনেই তো স্মৃতিচারণ করে থাকেন, নিজেদের জীবন নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, অথচ কথা বললে দেখা যায়, আগের দিনের ঘটনাই মনে রাখতে পারেন না!
পরিচয় দেওয়া, পরিচয় রক্ষা করা, পরিচয় বানানোর কর্মশালা হয়ে উঠেছে কি এই সময়টা? দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়াদের যেন প্রশ্ন একই। দেখার চোখ কি বদলাতে হবে, না কি বদলে ফেলতে হবে চারপাশটা? কখনও সে কথা উঠে এল স্মৃতি লেখা নিয়ে, কখনও আবার মুসলমান সমাজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা নিয়ে। হিন্দুরা কী করেন, কেমন ভাবে চলেন? কেমন ভাবে একে-অপরকে পথ দেখান অন্যকে ভালবাসতে বারণ করার জন্য? সংযুক্ত আরব আমিরশাহিরলেখক ওমর ঘোবাশ এবং রকশন্দা জলিলে সে সব নিয়ে বহু কথাই বললেন। কোনও সমস্যাই যে এক দিনের নয়, তুলে ধরলেন ওমর। তবে চার দিকটা যদি একই রকম হয়ে ওঠে, তবে কি আর তাকে সমস্যা বলা যায়?নাকি পরিচয় নিয়ে আতঙ্ককেই বাস্তব বলতে হবে এ সময়ে?
আরও পড়ুন: চিন ফেরত দুই ব্যক্তি মুম্বইয়ে, রাখা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে
দেশ জুড়ে যখন গেল গেল রব উঠেছে, এনআরসি-র বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে, তখন জয়পুরের আলাদা হওয়ার কথাও ছিল না। তবে এখানে ‘অন্য’ মানেই সংখ্যালঘু সমাজ নয়। ‘অন্য’ মানে কখনও হয়ে উঠল মহিলাদের অন্দরমহল, কখনও বা পাশের বাড়ির একই ধর্মের মানুষরাও। তারই মাঝে শশী তরুর, শোভা দে, লিসা রায়, শুভা মুদগলের মতো ‘মেনস্ট্রিম’ স্বরেরা জানিয়ে গেলেন, নিজের মতো ভাবতে চাইলে পাশেই থাকেন তাঁরাও। হয়তো কখনও অন্য কথা উঠবেই, বিতর্ক চলবে নানা মানুষ, নানা ভাবনাকে ঘিরে, তবে জয়পুর আবারও দেখাচ্ছে, হাতে হাত রেখে চলতে চাইলে সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যায়। সঙ্গ দিতে চাইলে পাওয়া যায় গুরুত্বর্পূণ কারণও। এ সময়টা যে একে অন্যের পাশে থাকার, তা বোঝাতেই যে এক দল বিদ্বজ্জন জড়ো হয়েছেন একই প্রাঙ্গণে!