Bangladesh Unrest

কাঁটাতারহীন সীমান্ত নিয়ে বিএসএফের উদ্বেগ

বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে জানান, দক্ষিণবঙ্গে ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গায় কাঁটাতার নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:১৭
Share:

বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থির। তাই কড়া নজরদারি চলছে ত্রিপুরার নিশ্চিন্তপুর সীমান্তে। রবিবার। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

ধর্মীয় নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং বাংলাদেশে অশান্তির আঁচ এসে পড়েছে ভারতেও। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে বলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আশঙ্কা। ও জোরদার হচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে কাঁটাতারহীন সীমান্তও বিএসএফ-কে উদ্বগে রেখেছে।

Advertisement

বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে জানান, দক্ষিণবঙ্গে ৯০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গায় কাঁটাতার নেই। বিএসএফ-এর আশঙ্কা ওই কাঁটাতারহীন জায়গা ব্যবহার করেই অনুপ্রবেশের চেষ্টা হতে পারে। বিপন্ন সাধারণ মানুযের সঙ্গে মিশে দুষ্কৃতী, পাচারকারী, জঙ্গিরাও সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকতে পারে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এ দেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন বিএসএফের কর্তারা। পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিএসএফ সব সময়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান রুখতে কড়া নজরদারি চালায়। বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতির জেরে অনুপ্রবেশ রুখতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। জওয়ানদের সব সময়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ সীমান্তবর্তী গ্রামেঅচেনা কাউকে দেখলেই বিএসএফ-কে জানাতে বলেছেন বাহিনীর কর্তারা।

বিএসএফ সূত্রের খবর, নদিয়া, ২৪ পরগনা দিয়েই অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে বেশি ঢোকার চেষ্টা বেশি করে। কারণ এই জেলাগুলি থেকে দ্রুত কলকাতায় চলে এসে ভিড়ে মিশে যাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, কলকাতার একটি হোটেল থেকে সম্প্রতি সেলিম মাতব্বর নামে বিএনপি-র সক্রিয় সদস্য এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে ২০২৩ সালে নদিয়া দিয়েই ভারতে ঢুকেছিলেন তিনি। নাম ভাঁড়িয়ে সেলিম ভারতীয় আধার কার্ড, পাসপোর্টও তৈরি করে নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে উন্মুক্ত সীমান্ত থাকায় বিভিন্ন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরাও উদ্বিগ্ন। উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার স্থল সীমান্তের মধ্যে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটারের অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। ঘোজাডাঙার বাসিন্দা রতন পরামানিক, বসন্ত খাঁড়া বলেন, ‘‘কাঁটাতার না থাকায় যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা এ-পারে ঢুকে পড়ার আশঙ্কায় আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

মালদহেও সীমান্তে অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। বিএসএফের দাবি, উন্মুক্ত সীমান্তে ৪০ মিটার অন্তর ২৪ ঘণ্টার জন্য জওয়ান মোতায়েন রয়েছে। টহলদারির
সুবিধার জন্য জওয়ানদের সাইকেল, রাতে নজরদারির জন্য সার্চ লাইট, দূরবীন দেওয়া হয়েছে। উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার জমি না দেওয়ায় জমি অধিগ্রহণ সময় মতো হয়নি। তাই সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় মানুষের হয়রানি হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী পাল্টা বলেন, “খগেনবাবুদের উচিত, কেন্দ্রকে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপরে নজর দিতে বলা।”

নদিয়ায় প্রায় ২১৬ কিলোমিটার সীমান্তের প্রায় ২০.৬১১ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার নেই। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলার শুধু ধানতলা ও হাঁসখালি থানা এলাকাতেই ৫০টিরও বেশি অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ২৫০ জন। রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে নদিয়া জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের ব্যর্থতায় সীমান্তের সর্বত্র কাঁটাতার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’ চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের দাবি, “জমি নিয়ে আইনি জট রয়েছে। সবটাই কেন্দ্র ও কোর্টের ব্যাপার। রাজ্যের কিছু করার নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement