স্বামীর কফিনের সামনে কান্নায়ে ভেঙে পড়েছেন ব্রিগেডিয়ার এলএস লিডারের স্ত্রী। ছবি সৌজন্য টুইটার।
এক দৃশ্য। দুই সময়। দুই প্রেক্ষিত। সাম্প্রতিকটি ২০২১-এর ১০ ডিসেম্বর সকালে দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে ব্রার স্কোয়ারে। স্বামীর কফিনের উপর কান্নায় ভেঙে পড়া স্ত্রীর চুম্বন। অশ্রুসজল চোখে স্বামীকে শেষ বিদায় জানানো। আর আগেরটি হল, ২০১৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি হরিদ্বারের ঘটনা। একই ভাবে স্বামীর কফিনের উপর তাঁর উদ্দেশে চুম্বন ছুড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রী। তার পর মুখ নিচু করে অন্তিম শয্যায় শায়িত স্বামীর উদ্দেশ্যে অজান্তেই যেন মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল চিরায়ত প্রেমের তিনটি অভিজ্ঞান-শব্দ, ‘আই লভ ইউ’।
ঘটনাচক্রে দু’জনেই ভারতীয় সেনায় কর্মরত ছিলেন। প্রথম জন ব্রিগেডিয়ার এলএস লিডার। গত বুধবার সেনা কপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়ত এবং তাঁর স্ত্রী-সহ ১৩ জনের।
শুক্রবার সকালে প্রয়াত ব্রিগেডিয়ারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ সেনার পদস্থ কর্তারা। জাতীয় পতাকায় মোড়া ব্রিগেডিয়ারের কফিনে এক এক করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন তাঁরা। তার পরই স্বামীর কফিনের দিকে মেয়েকে নিয়ে এগিয়ে এলেন তাঁর স্ত্রী। কফিনের উপর ঝুঁকে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তার পর অন্তিম শয্যায় শায়িত স্বামীর কফিনে চুম্বন করতে দেখা যায় তাঁকে। পাশে দাঁড়ানো ব্রিগেডিয়ারের মেয়েও বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছিল। এই দৃশ্যই ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারির হরিদ্বারের সেই স্মৃতিকে যেন ফের ভাসিয়ে তুলল।
২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪৯ জন সিআরপিএফ জওয়ান। সেই দলে ছিলেন হরিদ্বারের বাসিন্দা মেজর বিভূতিশঙ্কর ধৌনদয়াল। ২০১৮-তে নিকিতার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ধৌনদয়ালের। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই স্বামীকে হারিয়ে শোকের পাথর হয়ে গিয়েছিলেন নিকিতা। ধৌনদয়ালের দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতেই গোটা গ্রাম কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। স্বামীর কফিনের সামনেই বসে ছিলেন নিকিতা। চোখে জল নেই। দৃষ্টিতে অবাক শূন্যতা, বিহ্বলতা। নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল,, স্বামীর কফিন আলতো করে খুলে ভিতরে স্বামীর মুখটা দেখে নিলেন নিকিতা। এর পর স্বামীর উদ্দেশে চুম্বন। তার পর মুখ নিচু করে অন্তিম শয্যায় শায়িত স্বামীর উদ্দেশ্যে অজান্তেই যেন নিকিতার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ‘আই লভ ইউ’।
এই দৃশ্য দেখে শেষকৃত্যে হাজির সেনা-পুলিশের কর্তারাও বিচলিত হয়েছিলেন। সেই দৃশ্যেরই যেন পুনরাবৃত্তি হল হরিদ্বার থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে দিল্লির ক্যান্টনমেন্টে ব্রার স্কোয়ারে ব্রিগেডিয়ার এলএস লিডারের শেষকৃত্যে। আর এই দৃশ্যই যেন দুই সময়কে এক সূত্রে বেঁধে দিল।