বড়ো স্বশাসিত পরিষদের (বিটিসি) ক্ষমতা ফের ধরে রাখলেও, প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ও অ-বড়োদের অনাস্থায় এই প্রথম বার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না হাগ্রামা মহিলারির দল বিপিএফ। বড়োভূমির জন্য ৫০০ কোটি টাকার ‘আর্থিক সাহায্যের’ আশ্বাস দিয়েও খালি হাতে ফিরল কংগ্রেস। মহিলারি বলেন, ‘‘কঠিন লড়াই ছিল। জনাদেশ মাথায় তুলে নিলাম. নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে আমরা পরিষদ গড়ব।’’
২০০৩ সালে বড়ো চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই স্বশাসিত পরিষদের ক্ষমতা হাগ্রামার হাতে। ২০০৫ ও ২০১০ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে ৩৯ ও ৩৩টি আসন দখল করে বিপিএফ। এ বারও হাগ্রামা দাবি করেছিলেন, তাঁর দল ৩০টি আসন পাবে। কিন্তু, ২০টি আসনেই থেমে যায় তাঁর দলের বিজয়-রথ। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, মিলল না নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। বিপিএফ অবশ্য নির্দলদের দলে টেনে পরিষদের ক্ষমতা হাতে রাখছে। আগামী কাল দলীয় নেতারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পরিষদ গঠনের দাবি জানাবেন।
বড়োভূমির ভোটে এ বার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অ-বড়োদের মতামত। বড়োভূমির চারটি জেলায় বড়োদের সংখ্যা শতকরা হিসেবে ২৫-৩০ শতাংশ। বাকিরা অ-বড়ো। কিন্তু এত দিন সে ভাবে পরিষদে তাঁদের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। ভোটে ছিল না সংগঠিত লড়াই। গত লোকসভা ভোটে প্রথম অ-বড়োদের প্রতিনিধি হয়ে লড়তে নামেন হীরা শরনিয়া। জিতে সাংসদও হন। এ বারের নির্বাচনে অ-বড়ো সুরক্ষা মঞ্চ, সম্মিলিত জনগোষ্ঠীয় ঐক্যমঞ্চের প্রতিনিধিরা ৬টি আসন পেয়েছেন। প্রথম বার বড়োভূমিতে লড়তে নেমে এআইইউডিএফ পেয়েছে ৪টি আসন। সব মিলিয়ে অ-বড়ো সংগঠনের আসন সংখ্যা ১০।
ভোটের ফলে উৎসাহিত রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ। তারা জানায়, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়তে তারা প্রস্তুত। প্রাক-নির্বাচনী জোট না করলেও, নির্বাচনের পরে জোট বেঁধে তারা পরের বার শাসকের আসনেই বসতে চায়। বিজেপিরও ভোট বেড়েছে। এ বার একটি আসন জিতেছে তারা।
বিটিসি এলাকায় বিপিএফের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও অ-বড়োদের অবহেলা করার বিস্তর অভিযোগ ছিল। পরিষদে অ-বড়ো প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়ায় বিপিএফকে তাঁদের মতামত শুনে চলতে হবে।
কংগ্রেসের কাছে বড়ো পরিষদের ভোটের ফলাফল অশনি সঙ্কেত। লোকসভা, পুরভোটে ধাক্কা খাওয়া কংগ্রেসের কাছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরিষদের ভোট ছিল নিজেদের ক্ষমতা যাচাইয়ের রণক্ষেত্র। সম্প্রতি গাঁটছড়া ভেঙে দেওয়া বিপিএফ-এর বিরুদ্ধে পরিষদের ৪০টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত ও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের দাবি ছিল, তাঁরা ২০টি আসন পাবেন। জনসভায় বড়োভূমির জন্য ৫০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ প্যাকেজ’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন গগৈ। কিন্তু, কংগ্রেস একটিও আসন জিততে না পারায়, হাগ্রামা এ দিন ওই দলের সভাপতিকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ বারের ভোটে বিপিএফের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল অন্য বড়ো সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ পিসিডিআর। আবসু ওই মঞ্চকে সমর্থন জানিয়েছিল। কয়েকটি আসনে বিপিএফকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে পিসিডিআর। বিপিএফ-এর নিশ্চিত ৭টি আসনও ছিনিয়ে নেয়।
নির্বাচনে পরাজিত ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিটিসি-র স্পিকার পানিরাম ব্রহ্ম, পরিষদ সদস্য জেমস বসুমাতারি, দেরসাত বসুমাতারি, মনোকুমার ব্রহ্ম, বিপিপিএফ প্রধান রবিরাম নার্জারি। কোনও ভাবেমাত্র ৩৮ ভোটে জিতেছেন পরিষদের উপপ্রধান খাম্ফা বরগয়ারি।
ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে বড়োভূমিতে বিজয় উৎসব, মিছিল ও আতসবাজি ফাটানোর উপরে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।