জ্বলছে মণিপুর। ছবি: পিটিআই।
বিরোধী নেতৃত্ব যখন মণিপুরের হিংসা নিয়ে সরব, তখন পাল্টা চালে সংসদ ও সংসদের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে সরব হওয়ার কৌশল নিলেন সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষের মতো রাজ্য বিজেপি নেতারা। হিংসায় শাসক দল তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্না দেন রাজ্যের বিজেপি সাংসদেরা।
পশ্চিমবঙ্গের সন্ত্রাস নিয়ে যাতে লোকসভায় আলোচনা হয়, সে জন্য আজ সকালেই স্পিকারের কাছে নোটিস দেন সুকান্ত, দিলীপ ও রাজু বিস্তের মতো বিজেপি সাংসদেরা। লক্ষ্য পঞ্চায়েত হিংসার কথা বলে লোকসভায় বিরোধী জোটের অন্যতম বড় দল তৃণমূল কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলা। এ প্রসঙ্গে আজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তৃণমূল মণিপুরের সন্ত্রাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, কিন্তু হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় মণিপুরের মতোই মহিলাদের নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছে। যদিও তার ভিডিয়ো কেউ তুলে রাখেনি। তৃণমূল যদি মনে করে তাঁরা এই অত্যাচারের ঘটনা কাউকে জানতে দেবে না, তা হলে ভুল ভাবছে।” বিজেপির মতোই রাজ্যে তৃণমূলের হাতে হিংসার শিকার হয়েছে বাম-কংগ্রেস সমর্থকেরাও। হিংসা প্রশ্নে সংসদে আলোচনা হলে তৃণমূল প্রসঙ্গে আক্রান্ত ওই দলগুলির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধী জোটে বিভাজনের কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের ঢাল হিসেবে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার বিষয়টি যে সংসদে তোলা হবে, সেই ইঙ্গিত গত কালই দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। আজ অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই এ নিয়ে রাজ্য বিজেপি সাংসদদের মাঠে নামতে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, আজই যে সন্ত্রাস নিয়ে ধর্না দেওয়া হবে, এমন কোনও খবর ছিল না দলীয় সাংসদদের কাছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে তড়িঘড়ি গান্ধী মূর্তির সামনে জড়ো হতে বলা হয় বাংলার সাংসদদের। বঙ্গ বিজেপির আট সাংসদই আজ উপস্থিত ছিলেন গান্ধী মূর্তির সামনের ধর্নায়। পরে দুপুরে আজ উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন সুকান্ত। বাংলার রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। পরে সুকান্ত দাবি করেন, “বাংলায় হিংসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সেই কারণে তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে নিরাপত্তা দিতে জয়ী বা পরাজিত প্রার্থী ও তাঁদের পরিবারের অনেককে অসম, বিহার বা ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সুকান্তের দাবি, হিংসার হাত থেকে বাঁচতে ভিন্ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় শ’পাঁচেক বিজেপি নেতা-কর্মী। সূত্রের মতে, অনেক জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে দলবদল করার জন্য চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। তাঁদের ধরে রাখতেই পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রাস ও মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে রাজ্যে দল পাঠিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। সাংসদ সরোজ পাণ্ডের নেতৃত্বাধীন ওই দলটি আজ নড্ডার হাতে রিপোর্ট তুলে দেয়। রাজ্যের পরিস্থিতিও বিশদে নড্ডাকে ব্যাখ্যা করেন সাংসদেরা। পরে এ প্রসঙ্গে নড্ডা টুইটে লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গে যে আইনের শাসন নেই এবং রাজ্য সরকার যে বিরোধী দলের প্রতি অসংবেদনশীল, তা রিপোর্টেই স্পষ্ট। জনগণের উপরে এই অত্যাচার বিজেপি মেনে নেবে না।”