উত্তরপ্রদেশে ভোট যত এগিয়ে আসছে, গা ঝাড়া দিয়ে নড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে মায়াবতী এবং তাঁর দলকে। ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের শাসক দল এবং অন্যতম বিরোধী দলকে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ করলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। মঙ্গলবার তিনি এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের করা জিন্না সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্য তুলে এনে বলেন, এসপি এবং বিজেপির ভিতরে ভিতরে সংযোগ রয়েছে। এই দুই দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই রাজ্যের ভোটকে হিন্দু বনাম মুসলমানের লড়াইয়ে পরিণত করতে চাইছে। এই প্রসঙ্গে মায়াবতী ১৯৯০ সালে করসেবকদের উপরে তৎকালীন এসপি সরকারের গুলি চালানোর প্রসঙ্গ টেনে মন্তব্য করেন যে, সে বারও ইচ্ছে করেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করা হয়েছিল।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উনিশের লোকসভা ভোটের পর থেকেই মায়াবতীকে দেখা যাচ্ছে বিজেপি প্রশ্নে সুর নামিয়ে চলতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চলা একটি পুরনো মামলাকে ফের জাগিয়ে তোলার পরেই মোদী-বিরোধিতার ঝাঁঝ কমে যায় দলিত নেত্রীর। বিরোধী শিবির অভিযোগ তুলতে থাকে, কার্যত বিজেপির ‘বি দল’ হিসাবেই কাজ করছেন মায়াবতী।
উত্তরপ্রদেশে ভোট যত এগিয়ে আসছে, গা ঝাড়া দিয়ে নড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে মায়াবতী এবং তাঁর দলকে। কিন্তু তিনি যতটা না আক্রমণ করছেন বিজেপিকে, তার থেকে বেশি এসপি-কেই নিশানা করছেন। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর ফলে বিরোধী রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে রাজ্যে, হাত শক্ত হচ্ছে যোগী আদিত্যনাথেরই। মায়াবতী আজ বলেছেন, “দুই দলই ভিতরে ভিতরে চেষ্টা করছে, যাতে বিধানসভার নির্বাচনী লড়াইটা হিন্দু বনাম মুসলমানের হয়ে যায়। দু’টি দলই নিজেদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে রাজনীতি করছে।” এখানেই না থেমে মায়াবতীর মন্তব্য, “বিজেপি এবং এসপি সর্বদাই একে অন্যের পরিপূরক রাজনীতি করে। দু’টি দলই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। তবে উত্তরপ্রদেশের মানুষ এই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না, এটাই আমার বিশ্বাস।” রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মায়াবতীর এই প্রচারের ফলে বিজেপির হিন্দু ভোট আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু এসপি-র যারা সাবেকি ভোটব্যাঙ্ক, সেই মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহের বীজ তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে পারে এসপির-ই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এসপি-র পাশাপাশি আজ কংগ্রেসকেও আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে মায়াবতীকে। তাঁর বক্তব্য, প্রত্যেক বারই কংগ্রেস বড় বড় শপথ করে, কিন্তু কথা রাখে না। সম্প্রতি কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা রাজ্যের মহিলাদের কাছে পৌঁছনোর জন্য কোমর বেঁধেছেন। ভোটের আগে পাঁচ লক্ষ মহিলার কাছে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে কংগ্রেস। প্রিয়ঙ্কা ঘোষণা করেছেন, আসন্ন নির্বাচনে ৪০ শতাংশ টিকিট দেবেন মহিলাদের। বিষয়টি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে মায়াবতীকে। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস মানুষকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার ৫০ শতাংশও যদি পূর্ণ করতে পারত, তা হলে এই রাজ্য এবং কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস মুছে যেত না।”
অন্য দিকে, জিন্নার প্রশংসা করে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করা অখিলেশের হয়ে মাঠে নেমেছে তাঁর দল এসপি। ২০০৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর পাকিস্তান সফরের প্রসঙ্গ তুলে এসপি-র আক্রমণ, বিজেপির ওই শীর্ষ নেতা কেন জিন্নার সমাধিতে চাদর চড়াতে গিয়েছিলেন? এসপি নেতা নারদ রাই বলেছেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী স্বাধীনতা সংগ্রামে জিন্নার ভূমিকা স্মরণ করে তাঁর সমাধিতে চাদর চড়িয়েছিলেন। ঠিক একই ভাবে এসপি-র নেতাও জিন্নাকে স্মরণ করেছেন।
ভোটের কথা মাথায় রেখেই ‘দলীয়’ সুগন্ধী এনেছে এসপি। সাইকেল ছাপ মারা লাল-সবুজ কাচের বোতলে ভরা ওই সুগন্ধী ২২টি প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে। শিশির গায়ে লেখা ‘সমাজবাদী পার্টি।’ আজ এই সুগন্ধীর উদ্বোধন করে উত্তরপ্রদেশের কনৌজ বিধান পরিষদের সদস্য পম্মি জৈন বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এর
থেকে সমাজবাদের গন্ধ পাবেন। ২০২২ সালে বিদ্বেষের গন্ধ শেষ করবে এই সুগন্ধী।’’