ফাইল চিত্র।
হয়তো কাকতালীয়। কিন্তু বিহারে ভোট-প্রচারে বিজেপির বাঁধা গানের সুর আর কিছু কথার সঙ্গে আশ্চর্য মিল লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা তুলে ধরতে তৈরি এক সাম্প্রতিক ভোজপুরি অ্যালবামের!
ফারাক অবশ্য আরও বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলে দেওয়া ‘বোম্বই মে কা বা’ (মুম্বইয়ে আছেটা কী?) অ্যালবামে গানের প্রতি ছত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন গায়ক-অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী। কাজ খুইয়ে দেড় হাজার কিলোমিটার হাঁটতে শুরু করা থেকে ট্রাকের পিছনে গাদাগাদি ভিড়ে বাড়ি ফেরা— ফুটে উঠেছে সমস্ত দৃশ্যই। সেখানে ‘বিহার মে কা বা’ বলে শুরু হওয়া বিজেপির গানে ভাবখানা এই— যেন, এত দিন দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো বড় বড় শহর গড়ে এ বার বিহার তৈরির ডাকে ঘরে ফিরেছে তার ছেলে-মেয়েরা!
শ্রমিক সংগঠন সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের কটাক্ষ, “নিখাদ নির্বাচনী গিমিক। বিহারে সেই সংখ্যায় কারখানা কিংবা কাজ কই যে, ঘরে ফিরে সেখানেই জীবনধারণ করবেন কর্মীরা? লকডাউনে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় যাঁরা গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন, পেটের টানে তাঁদের অন্তত অর্ধেককে ফের ফিরে যেতে হয়েছে গুজরাত, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন রাজ্যে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিলক্ষণ জানেন, নিজেদের জমাট ক্ষোভ বিহার বিধানসভা ভোটের ব্যালট-বাক্সে উগরে দিতে পারেন ওই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে বিহারের সাম্প্রতিক প্রায় সমস্ত সরকারি ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে পাশে নিয়ে ওই কর্মীদের কর্মক্ষমতার ঢালাও প্রশংসা করেছেন তিনি। জাগানোর চেষ্টা করেছেন বিহারি অস্মিতাকে। বলেছেন, দেশের বহু বড় শহর তৈরি হয়েছে বিহারি কর্মীদের শ্রমে। তাঁদের নিরলস পরিশ্রমের সুফল কুড়িয়েছে অনেক রাজ্য। এ বার সেই শ্রমশক্তি যাতে বিহার গড়ারই কাজে লাগে, সেই বন্দোবস্তে আগ্রহী তাঁরা। অর্থাৎ, কাজের সুযোগ তৈরি হবে বিহারেই।
আরও পড়ুন: ‘অনেক মানুষ জমায়েত করলে খুশি হয় ভাইরাস’
আরও পড়ুন: যোগী রাজ্যের গ্রামে কর্মীর খোঁজে প্রিয়ঙ্কা
এই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলে প্রচারের গানের কলিতেও। বার্তা, ‘ভিন্ রাজ্যে কাজ অনেক করেছি। এ বার মুম্বই, দিল্লির মতো শহর তৈরি করব বিহারের মাটিতে।’ আবার ওই বিজ্ঞাপনেই ফোনে দাদাকে ভাই জানাচ্ছেন, ‘গ্রামে ফিরছি। ঋণ পাওয়া সারা। ব্যবসা শুরু করব ওখানেই’।
জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অনমিত্র রায় চৌধুরীর বক্তব্য, “কাজের সুযোগ তৈরির জন্য সবার আগে অর্থনীতির দাঁড় দাঁড়ানো জরুরি। প্রয়োজন নতুন লগ্নি। জরুরি চাহিদা চাঙ্গা হওয়া। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে আইসিইউ থেকে টেনে বার করে আনার দাওয়াই কেন্দ্রের হাতে রয়েছে বলে মনে হয়নি এখনও।” এই বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে যেখানে তুলনায় শিল্পোন্নত রাজ্যগুলিতেই নতুন বিনিয়োগ বাড়ন্ত, বেকারত্ব চরমে, সেখানে কোন জাদুতে বিহারের মতো আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা রাজ্যে বিজেপি বিপুল কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা স্পষ্ট নয় তাঁর কাছে।
বিহার মে কা বা!