কৃষকদের মন পেতে একাধিক ঘোষণার পথে হেঁটেছে বিজেপি। ছবি: পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোটের ঠিক আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি। আজ লখনউয়ে অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাথের প্রকাশ করা ওই ইস্তাহারে কৃষকদের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতি ছাড়াও মেধাবী ছাত্রীদের স্কুটার এবং ছাত্রদের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। লাভ জেহাদে দোষী সাব্যস্ত হলে ন্যূনতম দশ বছরের জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে বলেও ইস্তাহারে জানানো হয়েছে। আজ ইস্তাহার প্রকাশ করেছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-ও। দলের প্রধান অখিলেশ যাদব ইস্তাহার প্রকাশ করে বলেন, কন্যাসন্তানদের আজীবন বিনামূল্যে শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সরকার। পরিবার-পিছু বিনামূল্যে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ও কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনারও প্রতিশ্রুতি দেন অখিলেশ।
বিতর্কিত কৃষি আইনের জেরে উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের একটি বড় অংশ বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলেই দলীয় নেতাদের মত। তাই কৃষকদের মন পেতে একাধিক ঘোষণার পথে হেঁটেছে বিজেপি। ছোট ও মাঝারি চাষিদের কথা মাথায় রেখে ইস্তাহারে পাঁচ হাজার কোটি টাকার জলসেচ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ছোট ও মাঝারি চাষিদের সেচের কাজে লাগা বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেবে বলেছে বিজেপি। কেন্দ্র বিতর্কিত কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করলেও ফসলের ন্যূনতম দামের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে অনড় কৃষক সমাজের একাংশ। আজ তাই ইস্তাহারে আগামী পাঁচ বছর ধরে ধান ও গম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে কেনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বিজেপি। এ ছাড়া আলু, পেঁয়াজ ও টোম্যাটোও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনার কথা বিজেপি বলেছে এই ‘সঙ্কল্প পত্রে’। মাঠের ফসল যাতে দ্রুত পচে না যায়, তার জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কোল্ড চেন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ঘোষণাও করেছেন অমিত শাহেরা।
আগামী বৃহস্পতিবার ভোট রাজ্যে ‘আখের এলাকা’ বলে পরিচিত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৫৮টি আসনে। ওই এলাকার কৃষকদের সমর্থন পেতে তাই আখ থেকে চিনি উৎপাদনকারী কারখানাগুলির আধুনিকীকরণে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। অমিত শাহ বলেন, “চিনি কারখানাগুলি ১৪ দিনের মধ্যে আখের দাম মেটাতে না পারলে তাদের কৃষকদের মূল দামের উপরে সুদ দিতে হবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নিজের ইস্তাহারে ওই একই কথা বলেছেন এসপি নেতা অখিলেশও।
ইস্তাহারে কৃষকেরা ছাড়াও যুব সমাজের মন পেতে তৎপর হয়েছেন যোগী-শাহেরা। মেধাবী কলেজ ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে রানি লক্ষ্মীবাই যোজনায় তাঁদের বিনামূল্যে স্কুটার দেওয়া, স্বামী বিবেকানন্দ যুব স্বশক্তিকরণ যোজনায় রাজ্যের দু’কোটি মেধাবী ছাত্রকে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যে প্রায় ছ’কোটির বেশি মহিলা ভোটার। তাঁদের সমর্থন কুড়োতে সরকারি চাকরিতে মহিলাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছে বিজেপি। বলা হয়েছে, যোগী সরকার ফের ক্ষমতায় এলে ষাট বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের সরকারি বাসে যাতায়াত যেমন বিনামূল্যে করে দেওয়া হবে, তেমনই বছর দু’বার— হোলি ও দীপাবলির সময়ে রাজ্য সরকার প্রতিটি পরিবারকে গ্যাস সিলিন্ডার উপহার দেবে। শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ানোর প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইস্তাহারে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পাঁচ বছর আগে যেখানে শ’দুয়েক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব, এ বার তা নেমে এসেছে ১৩০-এ। ইস্তাহারের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩২ থেকে কমে হয়েছে ১৬। বিরোধীদের দাবি, পরাজয় বুঝতে পেরেই দায়সারা ভাবে ইস্তাহার বানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাল্টা যুক্তিতে অমিত শাহের বক্তব্য, পাঁচ বছর আগে তাঁদের দল যে ২১২টি সঙ্কল্প করেছিল, তার ৯২ শতাংশই পূরণ করতে পেরেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
বিজেপির মতোই আজ ইস্তাহার প্রকাশ করেছে এসপি। ইস্তাহারে আম আদমির জন্য দশ টাকায় ‘সমাজবাদী থালি’ চালু করা ছাড়াও দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের ধাঁচে পরিবার-পিছু ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অখিলেশ যাদব। গোটা রাজ্যে ১৮টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, শহরে বিনামূল্যে ওয়াইফাই বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অখিলেশের দল। রয়েছে প্রতিটি জেলায় মডেল স্কুল ও সৈনিক স্কুল তৈরি, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ছাত্রীদের ল্যাপটপ, মাধ্যমিক পাশ ছাত্রীদের ৩৬ হাজার টাকা ‘কন্যা বিদ্যা ধন’ দেওয়ার অঙ্গীকারও। কৃষকদের মন জিততে অখিলেশও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষকদের চার বছরের জন্য সুদবিহীন ঋণ, বছরে পাঁচ ব্যাগ ইউরিয়া, সেচের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে পুলিশে মহিলাদের কর্মসংস্থানে বিশেষ
ভাবে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন অখিলেশ।