Gujarat

গুজরাতে বহু প্রার্থী বদলের ভাবনা, ইঙ্গিত অমিতের

হিমাচল প্রদেশের ৬৮টি আসনের মধ্যে ২৩টিতে নতুন মুখকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। যার অর্থ, ওই রাজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ আসনে নতুন মুখের উপরে ভরসা করছেন দলীয় নেতৃত্ব।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০৫
Share:

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত পঞ্চাশটি আসনে নতুন মুখ দেওয়ার পরিকল্পনা বিজেপির। ফাইল চিত্র।

টানা আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে গুজরাতে ক্ষমতায় বিজেপি। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা যে সে রাজ্যে বাড়ছে তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। সে কথা মাথায় রেখে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত পঞ্চাশটি আসনে নতুন মুখ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, মূলত গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের অসন্তোষের কথা মনে রেখে পুরনো বিধায়কদের বদলে নতুন ও তরুণ মুখকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মশিবির। বাদ পড়তে পারেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও।

Advertisement

হিমাচল প্রদেশের ৬৮টি আসনের মধ্যে ২৩টিতে নতুন মুখকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। যার অর্থ, ওই রাজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ আসনে নতুন মুখের উপরে ভরসা করছেন দলীয় নেতৃত্ব। গুজরাতে সেই তুলনায় অন্তত ২৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী পাল্টানোর কথা ভাবছেন মোদী-শাহেরা। পাঁচ বছর আগে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে কান ঘেঁষে জিতেছিল বিজেপি। তাই এ বার কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এমন প্রার্থীদের টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতাসীন দল। রাজকোট বাদ দিলে সৌরাষ্ট্র এলাকায় ২০১৭ সালে বেশ খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিজেপি ওই এলাকায় অধিকাংশ পুরনো মুখ পাল্টানোর পক্ষপাতী।

গত বার মূলত পাটিদার আন্দোলনের কারণে সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ এলাকায় ৫৪টি আসনের মধ্যে ৩০টি কংগ্রেস ও একটি এনসিপি জিতেছিল। বিজেপি দখল করেছিল ২৩টি আসন। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘চলতি নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে তাই সৌরাষ্ট্র এলাকাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ গুজরাত বিধানসভায় সবচেয়ে বেশি বিধায়ক এই এলাকা থেকেই নির্বাচিত হন।’’পাঁচ বছর আগে এক দিকে দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবানী ও অন্য দিকে পাটিদার নেতা হার্দিক পটলের বিজেপির বিরুদ্ধে জোড়া আন্দোলন সৌরাষ্ট্র এলাকায় দলের খারাপ ফলের অন্যতম কারণ ছিল। এ বারে পরিস্থিতি ভিন্ন। হার্দিক এ বছরের জুনে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। জিগ্নেশ কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকে দলীয় রাজনীতির কারণে অনেকটাই কোণঠাসা। ফলে পাঁচ বছর আগে ওই দুই নেতা তাঁদের যে পরিমাণে সমস্যায় ফেলেছিলেন, এ বার তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও কোনও ঝুঁকি না নিয়ে যে সব বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। গুজরাতের এক শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘কোনও বিধায়ককে ফের টিকিট দেওয়া হবে কি হবে না, তার কোনও নির্দিষ্ট সমীকরণ নেই। মূল যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তা হল ওই প্রার্থীর নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা। তাই সব দিক বিবেচনা করেই যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবে দলের সংসদীয় বোর্ড।’’

Advertisement

ওই নেতার দাবি, রাজ্যের বিধায়কদের পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান, নিজ এলাকায় তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা, জেতার সম্ভাবনা, দুর্নীতি ও স্বজণপোষণের অভিযোগ রয়েছে কি না— সে সব দেখে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ আসনে প্রার্থী পাল্টানো হবে। পরিবর্তে সংগঠনের কাজে পারদর্শী, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন তরুণ মুখকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হয়েছে। তেমনি জেতার সম্ভাবনা থাকলে চার-পাঁচবারের বিধায়ককেও টিকিট দিতে পিছপা হবে না দল।এক সময়ে শহর ও আধা শহর এলাকায় যেখানে বিজেপির একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, পাঁচ বছর আগে সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমদাবাদ, সুরাত, রাজকোট ও বরোদার মতো বড় শহরগুলিতে ৫৫টির মধ্যে ৪৪টি আসন জিতেছিল বিজেপি। যা ২০১২ সালের তুলনায় তিনটি আসন কম। তেমনি রাজ্যের সার্বিক ১২৭টি আধা শহরভিত্তিক বিধানসভাগুলিতে কংগ্রেস ও তাঁর সঙ্গী দলগুলি মোট ৭২টি আসন জিতে গোটা রাজ্যে ৪১.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল।

তুলনায় আধা শহরগুলিতে মাত্র ৫৫টি আসন দখলে করেছিল বিজেপি। কিন্তু সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে প্রায় ৪৯.০৫ শতাংশ ভোট পেয়েও ২০টি আসনের ব্যবধানে বিজেপি গুজরাতে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। পাঁচ বছর পরে বিজেপির সেই শহুরে ভোটব্যাঙ্কে আম আদমি পার্টির উপস্থিতিতে আরও ভাঙন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। দলের অন্দরে বিজেপি নেতারাই স্বীকার করছেন, গুজরাতে এ বার কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement