রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের আগে ওবিসি-অস্ত্রেই রাহুল গান্ধীকে ধরাশায়ী করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে কংগ্রেস যখন বিরোধিতার সুর চড়াচ্ছে তখন বিজেপি এই ভাষ্য রচনায় ব্যস্ত যে, কাশ্মীরি পণ্ডিত তথা ‘উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি’ রাহুল আসলে জাতিবিদ্বেষী। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে নিচু নজরে দেখেন বলেই কুমন্তব্য করেও ক্ষমা চাইতে নারাজ তিনি। বিজেপির রাজ্যসভার দলনেতা পীযূষ গয়ালের দাবি, রাহুল ক্ষমা চাইলেই বিষয়টি মিটে যেতে পারত। কিন্তু অহঙ্কারে তিনি সে কাজ করেননি। কংগ্রেসের পাল্টা যুক্তি, রাহুল ওবিসি সমাজকে নিয়ে সামগ্রিক ভাবে আদৌ কিছু বলেননি। কিছু ব্যক্তির নাম করেছিলেন মাত্র। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।
বিজেপির দাবি, ‘মোদী’ পদবিধারীদের প্রসঙ্গে মন্তব্যের জেরে রাহুলের কারাদণ্ড ও সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে কংগ্রেস এমন ভাবে প্রচার চালাচ্ছে যেন রাহুল নির্দোষ। অথচ তাঁর আইনজীবী ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিলেও রাহুল তাতে কান দেননি। কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সন্তান হওয়ার অহঙ্কার থেকে সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উদ্দেশে করা মন্তব্য ঠিক বলে মনে করেছেন রাহুল। অথচ বিভিন্ন সময়ে অরুণ জেটলি, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো নেতারা বিরূপ মন্তব্য করেও ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেছেন। সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতির মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দলের নেতাদের একাংশের পরামর্শ সত্ত্বেও রাহুল সেই পথে গেলেন না।’’
লালু প্রসাদ, জয়ললিতা, বিজেপির মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের দুই বিধায়ক-সহ অন্তত ডজনখানেক সাংসদ-বিধায়ক আগে বিভিন্ন মামলায় দু’বছরের বেশি সাজা পাওয়ায় পদ খুইয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে পীযূষ গয়াল বলছেন, ‘‘এ যাত্রায় রাহুলকে যে ভাবে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে তা তাৎপর্যপূর্ণ। কংগ্রেস বুঝছে না, রাহুলকে তুলে ধরতে গিয়ে তারা অনবরত ওবিসি সমাজকে খাটো করছে।’’ আজ রাহুলের সমর্থনে কালো পোশাক পরে সংসদে এসেছিলেন কংগ্রেসের সাংসদেরা। পীযূষের প্রশ্ন, ‘‘কাকে কালো কাপড় দেখানো হচ্ছে? বিচার ব্যবস্থাকে— যারা রাহুলকে কুমন্তব্যের জন্য দু’বছরের সাজা শুনিয়েছে? না কি রাহুলের কুমন্তব্যের সমর্থনে ওই পোশাক? কারণ গোটা ঘটনায় বিজেপির কোনও ভূমিকাই নেই। যা করার আদালত করেছে।’’ বিজেপি জানিয়েছে, রাহুলের মন্তব্য নিয়ে দেশজোড়া প্রচারের জন্য তারা মাঠে নামাচ্ছে ওবিসি মোর্চাকে।
তবে রাজনীতির অনেকের মতে, রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের ঘটনা গান্ধী পরিবারের নামে ফের কংগ্রেসের ভোটকে এককাট্টা করে দিতে পারে বলে আশঙ্কাও রয়েছে বিজেপির একাংশের। তাই বিষয়টিকে ‘রাহুল বনাম ওবিসি সমাজ’-এর বৃহত্তর চেহারা দিতে চাইছে তারা। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ওবিসি ভোট ভাঙানোও বিজেপির অন্যতম বড় লক্ষ্য হবে।