Mamata Banerjee

বিজেপির মুখে মমতার ইস্তফার দাবি দিল্লিতেও

বিজেপির দাবি, আরজি করের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়েছে, তাই প্রশাসক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১০
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

Advertisement

কলকাতার রাজপথ থেকে দাবি উঠেছে আগেই। এ বার দিল্লির কেন্দ্রীয় মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা চেয়ে সরব বিজেপি। দলের দাবি, আরজি করের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়েছে, তাই প্রশাসক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মমতা। অন্য দিকে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মমতার ইস্তফা চাওয়া থেকেই স্পষ্ট, আরজি করের আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লেগে গিয়েছে। নির্বাচনে এঁটে উঠতে না পেরে এ ভাবেই মমতাকে হটাতে চায় বিজেপি।

আজ তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে বলেন, ‘‘বিজেপি মমতার পদত্যাগ চাই বলে প্রচার চালাচ্ছে। কারণ বিজেপির লক্ষ্য হল সরকার ফেলে দেওয়া।’’ বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া দলের কেন্দ্রীয় মঞ্চ থেকে মমতার ইস্তফা চেয়ে সরব হন। ভাটিয়া বলেন, ‘‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেই শাস্তির জন্য যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ প্রয়োজন। কিন্তু মমতা পরিকল্পিত ভাবে তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করেছেন। তাই ন্যায় পেতে (নি)র্মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত এখনই ইস্তফা দেওয়া।’’ জবাবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘হাথরস, বিলকিস বানো, মণিপুরের ঘটনা বা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যখন মহিলা কুস্তিগিরেরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তখন গৌরব ভাটিয়া কোথায় ছিলেন? আগে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদদের ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’

Advertisement

আজ ইন্ডিয়া শরিকদের নীরবতা, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভাটিয়া। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিশাসিত রাজ্যে মহিলাদের সঙ্গে অন্যায় হলে রাহুল তেড়েফুঁড়ে বিচার চাইতে নেমে পড়েন। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের রাজ্য হলে সেই উদ্যোগ দেখা যায় না।’’ কংগ্রেস আরজি করের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করার রাস্তা নিচ্ছে না। উল্টে নেট-মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের জন্য তৃণমূলের সুরেই বিজেপির দিকে আঙুল তুলছে তারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘রোজ নতুন নতুন তত্ত্ব নেট-মাধ্যমে এমন ভাবে ছড়ানো হচ্ছে, যাতে বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা হয়।’’ মমতার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে পবন বলেন, ‘‘উনি তো এ বিষয়ে কথা বলছেন। নীরব থাকছেন না। তবে নির্যাতিতার পরিবার যে সব প্রশ্ন তুলছে, যে সব সংশয় প্রকাশ করছে, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আমি নিশ্চিত, পরিবার জবাব পাবে। তদন্ত নিয়েও তাঁদের কোনও অভিযোগ থাকবে না।’’

আরজি কর নিয়ে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে ১৪ দফা প্রশ্ন রেখেছে রাজ্য বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোমবার বিধাননগরে দলীয় দফতরে পুরো তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকা ও অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সুকান্তের প্রশ্ন, কেন মৃতদেহ দাহ করতে তাড়াহুড়ো করল পুলিশ? ময়নাতদন্তে উল্লিখিত, মৃতার শরীরে পাওয়া সাদা অর্ধতরল পদার্থের ডিএনএ পরীক্ষা কি করা হয়েছিল? হাসপাতালের একটি অংশ যে সংস্কার করা হবে, তার জন্য কি টেন্ডার চাওয়া হয়েছিল? অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় কেন পুলিশ ব্যারাকে থাকতেন? তাঁর মাথায় কার হাত ছিল? সন্দীপ কত বড় মাপের চিকিৎসক যে তাঁকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুনর্বাসন দিতে হল? রবিবারে বড় ম্যাচ বাতিল ও সমর্থকদের উপর পুলিশি হামলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তৃণমূলের প্রশ্ন, উন্নাও, হাথরসের সময়ে এই প্রশ্নগুলো মনে আসেনি? জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে উন্নাও কিংবা হাথরসে রাত কাটাতে হবে না। কলকাতা কিংবা বালুরঘাটে তারা রাত কাটাবে। তাই আমায় রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন করতে হবে।’’

প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও। তৃণমূলের অভিযোগ, তদন্তের গতি শ্লথ করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ভাষ্য’ তৈরি করার সুযোগ সিবিআই করে দিচ্ছে বিজেপিকে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের পর এই নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন আরও দুই সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এবং সাকেত গোখলে। ডেরেকের কথায়, ‘‘১৪ অগস্ট সিবিআই-এর হাতে তদন্ত তুলে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পরেও তারা নীরব। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ছড়ানো অসংখ্য গুজবের মোকাবিলার জন্যও সিবিআই চেষ্টা করেনি।’’

ডেরেকের প্রশ্ন, ‘‘তা হলে সিবিআই করছেটা কী? এই মুহূর্তে তো মনে হচ্ছে, তারা মাথাটা ঝুঁকিয়ে রয়েছে যাতে বিজেপি রাজ্য সরকারকে নিশানা করতে পারে আর মিথ্যা ভাষ্য ছড়াতে পারে। বিরোধী দলগুলি সিবিআই-এর কাছ থেকে একটি শব্দও দাবি করছে না। আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সিবিআই তদন্ত সম্পর্কে বিশদে জানাক।’’ একই সুরে কংগ্রেসের পবন খেরার দাবি, সিবিআইয়ের উচিত ছিল একটি বিবৃতি জারি করে বিষয়টি জানানো। যাতে গোটা ঘটনা নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যে আবহ তৈরির চেষ্টা চলছে, তা আটকানো যায়।

বিজেপি শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিবিআই তদন্তে আলগা দিলে বা অপরাধীদের ছাড় দিলে তো আখেরে লাভ তৃণমূলের। যেখানে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলের আনুকূল্য পাওয়া চক্র এই হত্যার পিছনে রয়েছে।’’ উল্টো দিকে তৃণমূল ও কংগ্রেসের দাবি নিয়ে সিবিআই সূত্রে যুক্তি, কোনও ক্ষেত্রেই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে রোজ বিবৃতি জারি করা হয় না। বরঞ্চ তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তথ্য না জানানোটাই নিয়ম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement