প্রয়াত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আচমকাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তড়িঘড়ি দিল্লির এমসে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই রাত সওয়া ১০টা নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। এই দুঃসময়ে সুষমা স্বরাজের পরিবারের পাশে থাকতে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছেছেন দলের শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন, নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল এবং প্রহ্লাদ জোশী।
দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সুষমা স্বরাজ। যে কারণে এ বছর লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেননি তিনি। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আগের মতোই সক্রিয় ছিলেন তিনি। সম্প্রতি সংসদে তিন তালাক বিল পাশ হওয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দনও জানান। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার সিদ্ধান্তেও সমর্থন ছিল তাঁর। এ দিন সন্ধ্যাতেও তা নিয়ে টুইট করেন তিনি। কাশ্মীর নিয়ে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
এ দিন সন্ধ্যা ৭টা ২৩মিনিটে শেষ বার টুইট করেন তিনি। তাতে কাশ্মীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীজি আপনাকে অভিনন্দন। অসংখ্য ধন্যবাদ। বেঁচে থাকতে এই দিনটা দেখার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’’
সুষমা স্বরাজের অকস্মাৎ প্রয়াণে টুইটারে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, ‘অসাধারণ বক্তা এবং সাংসদ ছিলেন সুষমাজি। দলের সকলে তাঁকে সম্মান করতেন। আদর্শ এবং বিজেপির স্বার্থ নিয়ে কখনওই আপস করেননি। দলের উন্নতিতে বিরাট ভূমিকা ওঁর।’
কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘সুষমা স্বরাজের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আমরা। ওঁর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠদের সমবেদনা জানাই।’
পেশায় আইনজীবী সুষমা স্বরাজ এক সময় সুপ্রিম কোর্টেও প্র্যাকটিস করেছেন। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর। জরুরি অবস্থার পর যোগ দেন বিজেপিতে। আর অল্প দিনের মধ্যেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিক হিসাবে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মোট সাত বার সাংসদ নির্বাচিত হন সুষমা স্বরাজ। ১৯৭৭ সালে দেশের সর্বকনিষ্ঠ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন।
এর পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে সামলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং স্বাস্থ্য দফতরও। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে, বিদেশ দফতরের দায়িত্ব হাতে পান সুষমা, যা ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে তাঁকে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে বিপদে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর দ্বারস্থ হতেন সাধারণ মানুষ। চটজলদি তাঁদের দিকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিতেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। সংসদে তাঁর বাগ্মিতার প্রশংসক ছিলেন অনেকেই। তাঁর অকস্মাৎ প্রয়াণে তাই শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশ জুড়ে।