‘লাল সরকার’ ছবির পোস্টার। সুনীল কোনও পথই বাদ রাখেননি বলে মনে করে বিজেপি।
শূন্য থেকে এক লাফে ৩৬। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বিজেপি-র সাফল্যের লাফটা ছিল এই রকমই। আর বিজেপি শিবির যাঁকে সেই সাফল্যের কাণ্ডারি বলে মনে করে সেই সুনীল দেওধর বলছেন, ‘‘তৃণমূল যতই চেষ্টা করুক, ত্রিপুরার মাটিতে ঘাসফুল ফোটানো অত সহজ হবে না। আমাদের সংগঠনের ভিত ওখানে অনেক মজবুত।’’
২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পরেই ‘লুক ইস্ট’ পলিসি নেয় গেরুয়া শিবির। এক সময়ের আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ)-এর প্রচারক সুনীল এখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক। রাজনীতিতে আসার পরে প্রথমে গুজরাতের দাহোড় জেলার দায়িত্বে ছিলেন। তখন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ছিলেন দক্ষিণ দিল্লির দায়িত্বে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীর দায়িত্ব সামলান সুনীল। অতীতে দীর্ঘসময় উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ে সঙ্ঘ প্রচারকের দায়িত্ব সামলানো সুনীলকে ত্রিপুরার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে।
ত্রিপুরা দখলের লক্ষ্যে মূলত মোদীর নির্দেশেই মুম্বইয়ের সুনীল আগরতলার পাকাপাকি বাসিন্দা হয়ে যান। ত্রিপুরায় বিজেপি-র সাফল্যের পর এখন তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের পর্যবেক্ষক। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুনীল বলেন, ‘‘আমি এখন ওই রাজ্যের দায়িত্বে নেই। তাই কোন পথে দল চলবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারি না। তবে দীর্ঘ দিন ওই রাজ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তৃণমূলকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে সায়মিক উত্তেজনা তৈরির বেশি কিছু করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে বাংলা আর ত্রিপুরায় অনেক ফারাক রয়েছে। হিন্দুত্বের বন্ধন ওখানে অনেক কঠিন।’’
বিপ্লব দেবকে ক্ষমতায় আনতে ‘ভারতমাতা’-র চেনা ছবিতেও বদল আনে বিজেপি।
ত্রিপুরায় হিন্দুত্বের মাটি শক্ত করতে যে সুনীল কোনও চেষ্টাই বাদ দেননি তা বিজেপি শিবিরে কান পাতলেই শোনা যায়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’র পরিচিত ছবিতে বদল এনেছিলেন সুনীল। হিন্দু ভাবাবেগ কাজে লাগাতে তাঁরই উদ্যোগে ২০১৭ সালে ত্রিপুরী জনজাতির পোশাকে সাজিয়েছিল বিজেপি। তা নিয়ে অনেক বিতর্কও তৈরি হয় সে সময়ে। শুধু এটুকুই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে বিজেপি-র উদ্যোগে ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরতে একটি চলচ্চিত্রও বানায় বিজেপি। গেরুয়া শিবির যদিও বলে, মুম্বইয়ের প্রোডাকশন হাউস‘হ্যাশট্যাগ ফিল্মস’ বানিয়েছিল সেই ছবি। তবে নানা বিতর্কে নির্বাচনের আগে ছবিটি মুক্তি পায়নি। তবে এটা ঠিক যে, ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যে বিজেপি কোনও রাস্তাই ছাড়েনি। বলা ভাল ছাড়েননি সুনীল। ফলও মিলেছিল। দীর্ঘ দিনের বামশাসিত ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী হন গেরুয়া শিবিরের বিপ্লব দেব।
সম্প্রতি ত্রিপুরায় প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক সংস্থার কর্মীদের আটক হওয়া থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতি। একের পর এক মন্ত্রী থেকে তৃণমূল নেতা গিয়েছেন আগরতলায়। গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গাড়িতে হামলার পাশাপাশি অন্য তৃণমূল নেতাদের উপরেও আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার অভিষেক-সহ তৃণমূলের পাঁচ নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে খোয়াই থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করলে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ভয় পেয়েছে বলেই এ সব করছে।’’
এই প্রসঙ্গে সুনীল বলেন, ‘‘তৃণমূল যেমন ভাবছে তেমন পরিস্থিতি নয় ত্রিপুরায়। ওখানে বুথ থেকে রাজ্য স্তরের সংগঠন মজবুত। তা ছাড়া নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি আছে। এখনও ত্রিপুরায় ১৬টি আসন আছে বামেদের দখলে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র উপরে ভরসা রেখেই লাল চোখ দেখানো সিপিএমকে শূন্য করবে ত্রিপুরার মানুষ। তারা ডবল ইঞ্জিন সরকারের মজা পেয়েছে। অসমের মতো ত্রিপুরাতেও বিজেপি শক্তি বাড়িয়ে ক্ষমতায় ফিরবে।’’ মুকুল রায় এখন তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় বিজেপি কি একটু ধাক্কা খাবে না? সুনীলের জবাব, ‘‘মুকুল রায়ের ভরসায় আমরা ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসিনি। উনি বিজেপি-তে আসার আগে আমাদের জমি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বরং, সেই সময়ে তৃণমূলের হয়ে ত্রিপুরার দায়িত্বে ছিলেন মুকুল রায়।’’