ছবি: এএফপি।
চাল চেলেছিলেন দুই ‘চাণক্য’ই। কিন্তু প্রবল ক্ষমতাধর অমিত শাহ কী করে হেরে গেলেন শরদ পওয়ারের কাছে? ‘পরাজয়’-এর জুতসই ব্যাখ্যা দিতে হোয়াটসঅ্যাপে বিজেপিই ছড়িয়েছিল পাল্টা ‘গল্প’। কিন্তু সে ‘গল্প’ প্রকাশ্যে আসায় ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। তাতে বিজেপির অস্বস্তিই বাড়়ল।
কী সে ‘গল্প’? মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে নাকি গচ্ছিত ছিল কেন্দ্রের ৪০ হাজার কোটি টাকা। যার উপরে নাকি নজর ছিল শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেসের। সেই টাকা কেন্দ্রে ফেরত পাঠানোর জন্য নাকি জেনেশুনেই দেবেন্দ্র ফডণবীসের ৮০ ঘণ্টার সরকার গড়া হয়েছিল অজিত পওয়ারের সমর্থনে!
‘গল্প’টি গত কাল সমর্থকদের সামনে আউড়ে দেন কর্নাটকে বিজেপি সাংসদ অনন্ত কুমার হেগড়ে। সে কথা ক্যামেরাবন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চা রদিকে। বিরোধীরা বিশ্বাস করেননি প্রথমে। এনসিপি নিজে প্রথমে বলে, ‘অবিশ্বাস্য’। পরে তারা সুর চড়িয়ে বলতে থাকে, ‘‘এ ঘটনা সত্যি হলে ইস্তফা দিন প্রধানমন্ত্রী।’’ দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেন, ‘‘এটা রাজ্যের মানুষের প্রতি ষড়যন্ত্র! প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন।’’ শিবসেনার সঞ্জয় রাউতও একই সুরে বলেন, ‘‘এ তো রাজ্যবাসীর সঙ্গে গদ্দারি!’’
আরও পড়ুন: ‘গুজরাতিরা অনুপ্রবেশকারী হলে ইতালীয়রা কী?’ অধীরের পাল্টা বিজেপির
অগত্যা সামনে আসতে হল সদ্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব খোয়ানো দেবেন্দ্র ফডণবীসকে। তিনি দাবি করলেন, কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেননি ওই ৮০ ঘণ্টায়। এ ভাবে কেন্দ্রের টাকা ফেরত দেওয়া যায় নাকি? প্রশ্ন দেবেন্দ্ররই। ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘‘আসলে নিজের দলের চাণক্য এ ভাবে হেরে যেতে পারেন, মানতে তো কষ্ট হয়! তাই একটু মহিমা বর্ণনা করেছেন বিজেপি সাংসদ। না হলে কেউ কি শুধু টাকা ফেরতের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন? মুখ্যমন্ত্রী হতে পারলে ৮০ ঘণ্টায় গদি ছাড়েন কেউ? তাতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের মুখ পোড়ে না?’’
সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে নানা দলের নেতারাই শোনাচ্ছেন মহারাষ্ট্রের কিস্সা। কেউ শোনালেন, শরদ পওয়ারই নাকি বিজেপির ঘরে সিঁধ কাটতে ভাইপো অজিতকে পাঠিয়েছিলেন। কারণ, তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, সেনা-কংগ্রেস-এনসিপি সরকার গড়তে চাইলে বিজেপি রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলবে কি না! সে কারণে অজিতকে পাঠিয়ে সরকার গড়ে তোলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন।
আর একটি ‘গল্প’ দাবি করছে, অমিত আর দেবেন্দ্রর অহঙ্কার চূর্ণ করাই উদ্ধব ঠাকরের প্রধান লক্ষ্য ছিল। তিনি নাকি রাজি ছিলেন নিতিন গডকড়ীকে পাঁচ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিতে। গডকড়ী কথা বলেছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে। আরএসএস-এরও সায় ছিল। কিন্তু রাজি হননি মোদী-শাহ। উদ্ধবের কোনও চাপেই মাথা নোয়াতে চাননি। ফলে ভেস্তে যায় সে প্রস্তাব। পওয়ার নিজে এ দিন এও দাবি করেন, তাঁর মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার টোপ দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু পওয়ার জোটের পক্ষেই থেকে যান।