দল প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ না খুললেও দলের একটি অংশের বক্তব্য, বর্তমানে কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী সরকার রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ভাবে সওয়াল করে বিরোধীদের সুবিধে করে দিচ্ছেন বরুণ।
প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফা ভোটের মুখে নতুন করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনায় সরব হলেন দলেরই সাংসদ বরুণ গান্ধী। শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক প্রতারণা রুখতে একটি শক্তিশালী সরকার দ্বারা কড়া পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করেন বরুণ। রাজনীতির অনেকের মতে, আজ ওই মন্তব্য করে বরুণ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, বর্তমান সরকার এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে অক্ষম। আগেও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে এবিজি-কেলেঙ্কারি নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন বরুণ।
সম্প্রতি গুজরাতের এবিজি শিপইয়ার্ড সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ সামনে এসেছে। এটি দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। কিন্তু গত কয়েক বছরে যে ভাবে একের পর এক ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা চোকানোর পরিবর্তে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন, তাতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছেন বরুণ। আজ নিজের টুইটে বরুণ লেখেন, ‘বিজয় মাল্য- ৯ হাজার কোটি, নীরব মোদী- ১৪ হাজার কোটি, ঋষি আগরওয়াল (এবিজি শিপওয়ার্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান)- ২৩ হাজার কোটি। যেখানে দেনার দায়ে দেশে প্রতিদিন ১৪ জন করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন, সেখানে ওই ধনপশুদের জীবন বৈভবের চরম সীমায়। এই চরম ভ্রষ্ট ব্যবস্থায় একটি মজবুত সরকারের কাছ থেকে কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।’ বিরোধীদের মতে, যে ভাবে মোদী সরকারের আমলে একের পর এক ব্যাঙ্ক দুর্নীতি সামনে এসেছে তাতে সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমানসে। বরুণ সেই আমজনতার প্রশ্নকেই তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে নীরব মোদীর ঘটনায় পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, এবিজি শিপওয়ার্ড দুর্নীতিতে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক প্রতারণার শিকার হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের অর্থ যেমন লোপাট হয়েছে, তেমনই ব্যাঙ্কগুলির অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের সুরেই তাই বরুণ এ ধরনের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পুনরাবৃত্তি রুখতে কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে সরব হয়েছেন। যে সমাধান বর্তমান সরকার দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে বারবার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।
বিজেপি সাংসদ হয়েও সাম্প্রতিক অতীতে মোদী সরকারের উদ্দেশে ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন বরুণ গান্ধী। পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর দাবিদার থাকা বরুণ এ বার দলের তারকা প্রচারকের তালিকাতেও নেই। মোদী সরকারের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ গিয়েছেন মা মেনকা গান্ধী। শুধু তাই নয়, মা-ছেলে দু’জনেই বাদ পড়েছেন দলের জাতীয় কর্মসমিতির তালিকা থেকেও। ফলে এই মুহূর্তে দলে বরুণের পরিচিতি একজন সাধারণ সাংসদ হিসাবে। এই আবহে কিছু দিন আগে মোদী সরকারের কৃষক নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে যে কৃষকেরা আন্দোলন করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ ছাড়াও, লখিমপুর খেরি কাণ্ডে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে প্রকাশ্যে সরব হন। পাশাপাশি ভোটের মুখে উত্তপ্রদেশের পিলিভিতে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে একাধিক সভায় বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব হয়েছেন এই বিজেপি সাংসসদক। যা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি দল।
আজও যে ভাবে ব্যাঙ্ক দুর্নীতি রুখতে শক্তিশালী সরকারের কাছ থেকে কড়া পদক্ষেপের দাবিতে বরুণ মুখ খুলেছেন, তাতে চরম অস্বস্তিতে বিজেপি। দল প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ না খুললেও দলের একটি অংশের বক্তব্য, বর্তমানে কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী সরকার রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ভাবে সওয়াল করে বিরোধীদের সুবিধে করে দিচ্ছেন বরুণ। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভোটের সময় বিজেপির সাংসদ হয়েও বরুণের এ ধরনের মন্তব্য দলের ক্ষতি করছে বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা।