জম্মুতে অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলেছে বিজেপি, বেকায়দায় কংগ্রেস

একের পর এক উচ্ছেদ অভিযান, সম্পত্তির কর বৃদ্ধি, টোল প্লাজ়ার বাড়বাড়ন্ত, ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা পালনে সরকারি ব্যর্থতা, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের অভাবে বিজেপির সামনে গোড়া থেকেই চ্যালেঞ্জ ছিল এ বারের জম্মুর ভোট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬
Share:

Sourced by the ABP

এ বারের নির্বাচন শুরুর এক পক্ষকাল আগেও ২০১৪-র বিধানসভা নির্বাচনে জম্মুর ৩৭টির মধ্যে ২৫টি আসন পাওয়া বিজেপিকে দেখাচ্ছিল কোণঠাসা, অন্তর্দ্বন্দ্বে মলিন। পাশাপাশি, এনসি-র সঙ্গে জোট গড়ে অনেকটাই চনমনে ছিল কংগ্রেস। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে দু’দফা ভোট হয়ে যাওয়ার পরে এই চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে বলে মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক শিবির। উপত্যকায় বিজেপি নিজেও কোনও আশা করছে না। কিন্তু জম্মুতে বিক্ষুব্ধ নেতা ও টিকিটপ্রার্থীদের অসন্তোষ অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। অন্য দিকে, কংগ্রেস শিবিরের নেতা-কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ স্পষ্ট। অনেক সরপঞ্চই তলে তলে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ আবার বসেও যাচ্ছেন প্রচারকার্য থেকে। সব মিলিয়ে জম্মুর হাওয়ায় ইঙ্গিত, মানুষের ক্ষোভ সত্ত্বেও দশ বছর আগে প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এখানে হয়তো ধরে রাখবে মোদী-শাহের দল।

Advertisement

একের পর এক উচ্ছেদ অভিযান, সম্পত্তির কর বৃদ্ধি, টোল প্লাজ়ার বাড়বাড়ন্ত, ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা পালনে সরকারি ব্যর্থতা, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের অভাবে বিজেপির সামনে গোড়া থেকেই চ্যালেঞ্জ ছিল এ বারের জম্মুর ভোট। প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের পরে বিজেপির সমস্যা বাড়ে, কারণ অনেক বড় নামকেই বাদ দেওয়া হয়। তাঁদের সমর্থকেরা প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। কিন্তু দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বার বার বৈঠক করে পরিস্থিতি ভিতর থেকে মেরামতির কাজটা দ্রুত করে উঠতে পেরেছে বিজেপি। এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এত দিন যাঁরা বিধায়ক ছিলেন, তাঁদের সরিয়ে নতুন মুখ আনলে জনতার ক্ষোভের বাষ্প অনেকটাই বার করে দেওয়া সম্ভব হবে।

জম্মু ও কাশ্মীরে মোট ৯০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস এনসি-র সঙ্গে জোট করে লড়ছে ৩২টি আসনে। তার মধ্যে ৫টি আসনে এনসি-র সঙ্গে তাদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’। এই ৩২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জম্মু থেকেই ২৯টি আসনে লড়ছে (বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই সমেত)। ঘরোয়া ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একাংশের অভিযোগ, টিকিট বণ্টনের সময়ে জাতপাতের সমীকরণ মাথায় রাখা হয়নি অথবা দুর্নীতি হয়েছে। সাতটি আসন রয়েছে, এমন অঞ্চলে উচ্চবর্ণ এবং মহাজন সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে মাত্র দু’টি আসনে (উধমপুর পশ্চিম এবং বিলাওয়াড়) দু’জন ব্রাহ্মণ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এক জন মহাজনকেও প্রার্থী করা হয়নি। পরে ক্ষত মেরামতির জন্য নতুন দুই মহাজনকে কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

Advertisement

ঐতিহ্যগত ভাবে কংগ্রেসের দুর্গ হিসেবেই পরিচিত ছিল জম্মুর আখনৌর এবং চাম্ব নির্বাচনী ক্ষেত্র। বাষট্টি সাল থেকে দু’বারের ব্যতিক্রম ছাড়া বার বার এই আসন জিতেছে কংগ্রেস। ২০১৪-তে এই দু’টি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এ বারে এই এলাকাগুলিতে কংগ্রেসের বিদ্রোহী নেতারা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক ভাগ করে সুবিধা করে দিতে পারেন বিজেপিকে।

জম্মুর সুচেতগড়ে বসে রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন চব্বিশের ভোটে নিজের এলাকা থেকে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখার প্রধান কারিগর, জেলা সভাপতি মনোজ যাদব। আসন ধরে ধরে জানালেন, যে আসন সংরক্ষিত নয় (ডোডা, সম্বল), সেখানে কংগ্রেস তফসিলি প্রাথী দিয়েছে। ফলে নির্দল হয়ে লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিট-প্রত্যাশীরা। জম্মুর আরও বেশ কিছু আসনে এমন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দলের মুখ নন। তাঁদের তিন প্রজন্ম সেই এলাকার নন। এলাকার মানুষ তাঁদের চেনেন না। অভিযোগ উঠছে, টিকিট বিক্রি করা হয়েছে নয়াদিল্লির কোনও শীর্ষ নেতাকে বোকা বানিয়ে অথবা রফা করে। ইতিমধ্যেই জম্মু এলাকায় ১০ জন ব্লক প্রধান এবং কিসান সেলের চেয়ারম্যান বিজেপিতে নাম লিখিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারাতে বদ্ধপরিকর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement