প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রায় সব বিরোধী শিবিরের দাবি সত্ত্বেও কেন ওবিসি-দের সংখ্যা নির্ধারণে জাতগণনা হবে না, তার উত্তর দিতে না পেরে আজ নরেন্দ্র মোদীর ওবিসি-পরিচিতিকে হাতিয়ার করল বিজেপি। ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এইচ ডি দেবগৌড়াই দেশে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় দেবগৌড়ার সামনেই বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা নরেন্দ্র মোদীকে ‘দেশের প্রথম ওবিসি প্রধানমন্ত্রী’ বলে দাবি করলেন। পড়লেন বিরোধীদের কটাক্ষের মুখেও।
বুধবার লোকসভায় সনিয়া ও রাহুল গান্ধী মহিলা সংরক্ষণ বিলে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি সেই একই দাবি তুলেছে। ওবিসিদের সংখ্যা নির্ধারনের জন্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ জাতগণনার দাবি তুলেছে। আজ রাজ্যসভাতেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিজেপি সরকার জাতগণনা থেকে পালাচ্ছে? মহিলা সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে কংগ্রেসের সাংসদরা রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিলে সংশোধনী এনেছেন। বিজেপি শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, ওবিসিদের সংখ্যা জানতে জাতগণনা এক দিকে কঠিন কাজ। শুধু পদবি দেখে কে ওবিসি, কে ওবিসি নন, তা বোঝা কঠিন। জাতগণনা করতে গেলে নানা রকম অশান্তি তৈরি হবে। দেশের জনসংখ্যায় ওবিসিদের হার ৪০ শতাংশ বলে জানা গেলে সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৭ শতাংশের বদলে আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে। কিন্তু জাতগণনা সম্ভব নয় বলে যুক্তি দিতে গেলে বিজেপির ওবিসি ভোট হারানোর ভয় রয়েছে। কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির বিজেপিকে সেই ফাঁদেই পা ফেলতে চাইছে।
এই চাপের মুখে বিজেপির কৌশল হল, কংগ্রেসের আমলে ওবিসিদের জন্য কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ তোলা। অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদীর ওবিসি-পরিচিতিকে সামনে রেখে মোদী জমানায় ওবিসিদের জন্য কী কী কাজ হয়েছে, তা তুলে ধরা। এই কৌশল নিয়েই আজ বিজেপি সভাপতি নড্ডা দাবি করেছেন, “বিজেপিই দেশকে প্রথম ওবিসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিয়েছে।” সে সময় দেবগৌড়া রাজ্যসভাতেই হাজির ছিলেন। নিজে কিছু না বললেও, নড্ডার দাবি শুনে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবিরের সাংসদরা দেবগৌড়াকে দেখিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নড্ডা অস্বস্তি এড়াতে যুক্তি দেন, বিজেপির কোনও ওবিসি নেতা প্রধানমন্ত্রী হননি। ‘দেবগৌড়াজি আমাদেরই লোক’ বলেও মন্তব্য করেন নড্ডা। তাতে অবশ্য প্রশ্ন কমেনি। কংগ্রেস থেকে আরজেডি, এসপি থেকে আম আদমি পার্টি প্রশ্ন তুলেছে, কেন বিজেপি জাতগণনার রাজি নয়? কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস শাসিত চারটি রাজ্যের মধ্যে তিন জন ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি কেন জাতগণনা থেকে পালাচ্ছে? কংগ্রেসের ন’জন সাংসদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত লোকসভা-বিধানসভায় ওবিসিদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের দাবি তুলে মহিলা বিলে সংশোধনী এনেছেন।
এই প্রশ্নের মুখে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। নড্ডা বলেছেন, কংগ্রেসের লোকসভায় মোট যত জন সাংসদ, তার থেকে বিজেপির ওবিসি সাংসদদের সংখ্যা বেশি। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ওবিসিদের সংরক্ষণের সুপারিশ সংক্রান্ত রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। রাহুল গান্ধী লোকসভায় অভিযোগ করেছিলেন, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ৯০ জন সচিবের মধ্যে তিন জন মাত্র ওবিসি। নড্ডা পাল্টা জবাবে বলেছেন, আইএএস-এ ওবিসি সংরক্ষণ এসেছে ১৯৯২-তে। এই সচিবেরা তার আগে নিযুক্ত হন। মনমোহন সরকারের ১০ বছরের আমলে কত জন ওবিসি সচিব ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননড্ডা। রাহুলকে কটাক্ষ করে নড্ডা বলেছেন, “নেতা হতে হলে নিজেকেও নেতা হতে হয়। গৃহশিক্ষক দিয়ে হয় না। এই সব শেখানো বিবৃতি দিয়ে কোনও লাভ হবে না।”