রাহুল গাঁধী.
‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিল গঠন নিয়ে এখন কোনও আপত্তি তোলা যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল। কারণ করোনা অতিমারির ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলায় যথেষ্ট অর্থ দরকার। সেটাই সময়ের চাহিদা। সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়েছে, ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলে সংগ্রহ করা অর্থ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল বা এনডিআরএফ-এ পাঠানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তবে সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, তা হলে সেটা করতে পারে।
‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিল গঠনের পরেই বিরোধীরা অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন। কারণ পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হিসেবে এই তহবিল গঠন করা হয়। ফলে এখানে কত টাকা জমা পড়ছে, সে টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, সরকারি হিসেব পরীক্ষক সংস্থা সিএজি তার হিসেব পরীক্ষা করবে না। বেসরকারি অডিট সংস্থা এই কাজ করবে। রাহুল গাঁধীর আরও অভিযোগ ছিল, একাধিক চিনা সংস্থা এতে টাকা ঢেলেছে। কোর্টে মামলা করে ‘সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন’ আর্জি জানায়, আদালত ‘পিএম কেয়ার্স’-এর টাকা এনডিআরএফে দিক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এমন কোনও নির্দেশ দিতে রাজি হয়নি।
স্বাভাবিক ভাবেই রায়ের পরে মোদী সরকারের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্ট ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলের স্বচ্ছতাতেই সিলমোহর বসিয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি, স্বচ্ছতার প্রশ্নে অকারণে হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে ‘পিএম কেয়ার্স’-কে নিশানা করা হয়েছে। বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, “এই রায় রাহুল গাঁধী ও তাঁর ভাড়াটে সমাজকর্মীদের কুটিল পরিকল্পনায় সজোরে ধাক্কা। কংগ্রেস ও তার সহযোগীদের বদ মতলব সত্বেও সত্যিটা এখন স্পষ্ট। এর পরে কি রাহুলরা নিজেদের শোধরাবেন, নাকি নিজেদের আরও অস্বস্তিতে ফেলবেন?” কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সরকার চাইলে ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলের টাকা এনডিআরএফ-এ পাঠাতে পারে।
বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায়ে বলেছে, “এখন সময়ের চাহিদা মেনে পরিস্থিতির মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহে পিএম কেয়ার্স তহবিল নামের পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠনে কোনও আপত্তি তোলা যাবে না।” কোভিড মোকাবিলায় মোদী সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগও আদালত খারিজ করেছে। বিচারপতিদের মতে, জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের মোকাবিলায় তৈরি ২০১৯-এর জাতীয় পরিকল্পনা কোভিড মোকাবিলায় যথেষ্ট।
কোভিড মোকাবিলায় মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও রাহুল গাঁধী সহ বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় মোদী সরকারের কোভিড মোকাবিলার দক্ষতায় সিলমোহর বসাল বলেও বিজেপি নেতারা দাবি করছেন। রবিশঙ্করের অভিযোগ, “রাহুল গাঁধী কোভিডের বিরুদ্ধে দেশের লড়াই দুর্বল করার চেষ্টায় কোনও কসুর করেননি।”
কংগ্রেস যদিও সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। তাদের অভিযোগ, এই রায় স্বচ্ছতা ও সরকারের দায়বদ্ধতার উপরে আঘাত। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট নিজেই বলেছিল, সূর্যের আলোই সব থেকে ভাল জীবাণুনাশক। কিন্তু সেই প্রথা থেকে সরে এসে ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিল নিয়ে জবাব চাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করল। এই তহবিলে জনগণের টাকা চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিয়মের জালে তহবিলে অস্বচ্ছতা তৈরি করেছে।” করোনায় সংক্রমিত ও অতিমারির ধাক্কায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে সুরাহা দেওয়ার জন্য ন্যূনতম মাপকাঠি তৈরি করে দেওয়ার জন্যও সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জমা পড়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছে, এই ধরনের নির্দেশিকা রয়েছে।