ত্রিপুরার সিপাহিজলা জেলার সুতারমুরা এলাকায় তছনছ এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি (বাঁ দিকে)। বিজেপির রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা এবং পশ্চিম ত্রিপুরার সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ছবি: ফেসবুক
ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদের নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে গত কাল। তার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির সমর্থকদের উপরে এবং তাঁদের দলীয় অফিসগুলিতে আক্রমণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর হিংসার ঘটনা রুখতে রাজ্যের স্বশাসিত পরিষদের এলাকাগুলিতে গত কাল রাত থেকেই ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল কাল রাতেই পুলিশ-প্রধানের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত এই ধরনের হামলা রুখতে বলেছে। রাজ্যের পুলিশ-প্রধান ভি এস যাদবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তিপ্রা মথার সঙ্গে সিপিএম-এর গণমুক্তি পরিষদের সমর্থকেরা এই সব হামলার ঘটনায় জড়িত রয়েছে।
রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে দেখে, আগামিকালের বিজয় মিছিল বাতিল করেছেন তিপ্রা মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যোত কিশোর। বিজেপির অভিযোগ খারিজ করে তিনি ঘোষণা করেছেন, “আমাদের দলের কোনও কর্মী হামলায় জড়িত নন। তিপ্রা মথার কেউ যদি কোনও রকম আক্রমণ বা চাঁদা তোলার ঘটনায় জড়ান, তা হলে তাঁকে দল থেকে বার করে দেওয়া হবে। তুলে দেওয়া হবে পুলিশের হাতে।”
নির্বাচনের আগেই বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, প্রশাসনের কিছু কর্তা এবং পুলিশকর্মী বিরোধীদের পক্ষে হয়ে কাজ করছেন। দলের মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য আজ দাবি করেন, আক্রমণের ঘটনাগুলির সঙ্গে যদি কোনও পুলিশকর্মী যুক্ত থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও যেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ যেন ঠিক ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে এবং কঠোর হাতে সমস্ত ধরনের হিংসা ও হামলার মোকাবেলা করে।
বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, “বিজেপি তাদের জনবিচ্ছিন্ন নীতির কারণে হেরে গিয়ে এখন সবেতেই সিপিএমের এবং গণমুক্তি পরিষদের ভূত দেখতে পাচ্ছে। বিজেপি এখন বলছে বিরোধীদের হয়ে কাজ করছেন প্রশাসনের কর্মীরা। এমন সময় আসবে, যখন ওরা বলবে, ওদের কার্যকর্তারাও জড়িত।”
বিজেপির কল্যাণী রায় কাল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “আমরা যদি মাঠে নেমে প্রতিরোধ করি, তা হলে কোনও রাজনৈতিক দল আমাদের সামলাতে পারবে না।” তিনি দাবি করেন, ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিপ্লবকুমার দেব রাজ্যে একটিও আক্রমণের ঘটনা ঘটতে দেননি। বিজেপি নেত্রীর এই দাবিকে ‘অসত্য’ আখ্যা দিয়েছে সিপিএমের জনজাতি সংগঠনের উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ এবং কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের সহসভাপতি তাপস দে-র মতে, দলের কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতেই বিজেপি সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের দিকে আঙুল তুলছে। বিজেপির নেতৃত্ব যে ভাবে পুলিশ প্রধানের দ্বারস্থ হয়েছেন, সেটা নিজেদের দলের সরকারের উপরেই তাঁদের অনাস্থার প্রকাশ। তাপসের কথায়, “সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এত দিন যে সব অভিযোগ তুলে এসেছে, বিজেপির নেতারা কার্যত তাতেই সিলমোহর দিলেন।”