ছবি: সংগৃহীত।
বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার লোকসভায় পেশ হল সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন সংশোধনী ও দিল্লি পুলিশ স্পেশাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট সংশোধনী। এই দুই বিলের মাধ্যমে সিবিআই ও ইডি-র ডিরেক্টরের মেয়াদ দু’বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর করার প্রস্তাব এনেছে সরকার। আজ বিল দু’টি সংসদে পেশ হলেও গত ১৪ নভেম্বর এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশ এনে দুই তদন্তকারী সংস্থার কর্তার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। আজ এই অধ্যাদেশকে আইন করতেই এই দুটি বিল আনা হল।
কর্মিবৃন্দ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বিলটি লোকসভায় পেশের উপক্রম করতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়, কংগ্রেসের শশী তারুর, অধীর চৌধুরীরা সরব হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি ইডি-র ডিরেক্টর সঞ্জয়কুমার মিশ্রের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সঞ্জয়ের মেয়াদ বাড়ানোর জন্যই কেন্দ্র এই আইন আনতে উঠে পড়ে লেগেছে এটাই বিরোধীদের দাবি। বেশ কিছু দিন ধরেই নীরব মোদী, মেহুল চোক্সী, বিজয় মাল্যকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের সারদা-নারদ থেকে কয়লা-কাণ্ড নিয়েও সক্রিয় ইডি। কংগ্রেস-সহ প্রায় সমস্ত দলের বিরোধী নেতার বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে ইডি-র ডিরেক্টরের পদে সঞ্জয়কে রাখতে সচেষ্ট ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার, এমনটাই মনে করছে বিরোধী শিবির।
আজ বিলটি পেশ করার সময়ে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “এই আইনের ফলে ইডি ডিরেক্টরের মেয়াদ দু’বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর করা হচ্ছে। কিন্তু এই মেয়াদ প্রতি বছর বাড়বে ওই তদন্তকারী সংস্থার প্রধানের কাজ কতটা কেন্দ্রীয় সরকারকে খুশি করতে পারে তার ভিত্তিতে।” অধীরের কথায়, “সঞ্জয়কুমার মিশ্রের মেয়াদ এই বছর ১৭ নভেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অধ্যাদেশ আনা হয়েছে ১৪ নভেম্বর। অর্থাৎ তাঁর অবসরের ঠিক তিন মাস আগে। এর কারণ আর কিছুই নয়, সরকারের সুরে যাতে অফিসারেরা নাচেন তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক কাঠোমোর যা যা রীতি নীতি এই সরকার তার বাইরে চলে যাচ্ছে।” পাশাপাশি সৌগত রায়ের বক্তব্য, “বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং বিরোধী দলগুলিকে বিব্রত করার একটি প্রধান অস্ত্র হিসাবে ইডি-কে ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার। ইডি-র বর্তমান ডিরেক্টরের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। কারণ বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক যে সব মামলা সরকার এনেছে সেগুলিকে আরও টানার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ন্যায় এবং সাম্যের মৌলিক ভিত্তির বিরোধী এই পদক্ষেপ।” সৌগত রায় সুপ্রিম কোর্টের অতীতের পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করে বলেন, “আদালত বলেছিল সিবিআই খাঁচার তোতায় পরিণত হয়েছে। যে বিল আসছে তা গণতন্ত্র বিরোধী।”
অন্য দিকে মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “আপনারা খাঁচার তোতার কথা বলছেন। মনে করে দেখুন এই কথা বলা হয়েছিল ইউপিএ আমলে। আমাদের সময়ে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে।” প্রশ্ন উঠছে কেন তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ আনা হয়েছে? জিতেন্দ্র ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, “আসলে অধ্যাদেশ আনতে হয়েছে বিরোধীদের ভয়ে! তাঁরা কখন কবে হট্টগোল করে সংসদ অচল করে দেন তার ঠিক নেই! যেমন গোটা বাদল অধিবেশন ভন্ডুল হয়েছিল। সরকারের তো কাজ বন্ধ রাখলে চলবে না। আজ যে আলোচনা হচ্ছে সেটা আমাদের সৌভাগ্য!”