মঙ্গল পাণ্ডে।
সাংগঠনিক দক্ষতার জেরে একের পর এক রাজ্যে বিজেপিকে সাফল্য এনে দেওয়ার জন্যই বিহার বিজেপির নেতা মঙ্গল পাণ্ডের কপালে পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্যের শিকে ছিঁড়ল বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। সাংগঠনিক অঙ্কে দক্ষ ওই নেতা হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক ও ঝাড়খণ্ডের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে দীর্ণ দলকে জেতার পথ দেখাতে পারবেন বলে আশা বিজেপির।
বিহার রাজনীতিতে এক সময়ে সুশীল মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন মঙ্গল। পরবর্তী সময়ে সুশীল বিহার বিজেপিতে শক্তিহীন হলে শিবির বদলান তিনি। সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের ঘনিষ্ঠ পাণ্ডে। বিজেপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ভূপেন্দ্র আবার অমিত শাহের আস্থাভাজন বলেই পরিচিত। বহু দিন ধরেই মোদী-অমিত শাহরা পশ্চিমবঙ্গ দখলে মরিয়া। সূত্রের মতে, সেই কাজ কতটা এগোচ্ছে, তা একেবারে খাস লোকের মাধ্যমে নজরদারি চালাতেই মঙ্গলকে পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে ২০১৯ সালে শপথ নেওয়া নীতীশ মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল এই মঙ্গলের বিরুদ্ধে। তাঁর মন্ত্রকের বিরুদ্ধে কোভিডের পরীক্ষা ও মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানোর অভিযোগও ওঠে।
১৯৮৭ সালে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-তে যোগ দেন পাণ্ডে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বিজেপিতে আসেন। ২০০০ সালে বিহার যুব মোর্চার প্রধান হন। লোকসভার নির্বাচনের ঠিক আগে ২০১৩ সালে পাণ্ডেকে বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি করা হয়। লোকসভায় ভাল ফল করার সুবাদে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সভাপতি থাকেন তিনি।
বিজেপি সভাপতির মেয়াদ শেষ হতেই তাঁকে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তাতেও যথেষ্ট সফল মঙ্গল। ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সে রাজ্যের অবধ অঞ্চলের দায়িত্ব পান পাণ্ডে। দক্ষ সংগঠনের জোরে ওই এলাকা থেকে দলকে প্রত্যাশার বেশি আসনে জিতিয়ে আনতে সক্ষম হন। ওই বছরেই হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে একক ভাবে দায়িত্ব পেয়ে কার্যত হারা ম্যাচ জিতিয়ে আনায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থাভাজন হন ওই নেতা। ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মধ্য কর্নাটক ও গত লোকসভায় ঝাড়খণ্ডের ভাল ফল করান দলকে। বিজেপি শিবিরের মতে, ধারাবাহিক সাফল্যের কারণেই পাণ্ডেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বেছে নিয়েছেন অমিত শাহ-জেপি নড্ডারা।
বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, তৃণমূলের মতো ক্যাডারভিত্তিক দলের সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্রয়োজন পাল্টা সংগঠন। যা গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে বুথ স্তর থেকে। পাণ্ডেও নীতিগত ভাবে শক্তিশালী বুথভিত্তিক সংগঠন গড়ায় বিশ্বাসী। এই মুহূর্তে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে চাপে তৃণমূল। এই সময়ে দলের আক্রমণের ধার বাড়াতেই পূর্ণ সময়ের জন্য মঙ্গল পাণ্ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ রাজ্য বিজেপিকে একজোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়াতে তিনি সফল হবেন বলেই আশা অমিত শাহদের।