ফাইল চিত্র।
অঙ্ক যেখানে শেষ, রাজনীতির সেখানেই শুরু। বিধায়ক ‘কেনাবেচা’ করে সরকার বদলে পারদর্শী হরিয়ানার এক প্রয়াত নেতার মুখে একদা শোনা গিয়েছিল এই কথা। নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ) মঙ্গলবার বিকেলে এনডিএ জোট ছাড়ার ঘোষণা করার পরে সেই কৌশলেই কি ভর করতে চলেছে বিজেপি?
নীতীশ এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের দাবি মেনে মঙ্গলবার রাতে রাজ্যপাল ফাগু চৌহান তাঁদের নয়া সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বুধবার দুপুর ২টোয় নীতীশ মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদে এবং লালুপ্রসাদ-পুত্র তেজস্বী উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন বলে আরজেডি সূত্রের দাবি। এই দাবি সত্যি হলে অন্তত প্রাথমিক ভাবে বিজেপির পক্ষে নীতীশদের আটকানো সম্ভব হবে না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিহারের পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসাব বলেছে নীতীশ কুমার এনডিএ জোট ছাড়ার ঘোষণার পরেই মগধভূমের রাজনীতিতে ফের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে বিজেপি। বর্তমানে ২৪২ আসনের বিধানসভায় আরজেডি-জেডি (ইউ)-কংগ্রেস-বাম-হামের মহাগঠবন্ধনে রয়েছেন ১৬৪ জন বিধায়ক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের কাছে নীতীশেরা সমর্থনকারী বিধায়কদের তালিকা দিয়েছেন। তাতে আরজেডির ৭৯, জেডি (ইউ)-র ৪৫, কংগ্রেসের ১৯ এবং ১৬ জন বাম বিধায়কের পাশাপাশি হাম-এর ৪ এমনকি একমাত্র নির্দল বিধায়ক সুমিত সিংহেরও নাম রয়েছে। অন্য দিকে, বিজেপির রয়েছে ৭৭ জন বিধায়ক।
এই পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে বিজেপি মহাগঠবন্ধন সরকারের উপর চাপ বাড়াতে পারে বলে আঁচ মিলেছে মঙ্গলবার। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি নেতা বিজয়কুমার সিন্হা । একটি সূত্রের খবর, অভব্য আচরণে অভিযুক্ত ১৮ জন আরজেডি বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ করতে পারেন তিনি। ওই বিধায়কদের বিরুদ্ধে স্পিকারকে হেনস্থা, তাঁর দফতরে হামলা চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ বিচারাধীন। তাঁদের বরখাস্ত করা হলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও নিশ্চিত ভাবেই কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে নীতীশ সরকার।
বিহারের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত, ২০১৭ সালে মহাগঠবন্ধন ছেড়ে বিজেপি শিবিরে যাওয়ার সময় নীতীশ প্রকাশ্যে লালু পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ‘সক্রিয়’ হতে পারে বলে বিজেপির একটি সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই ‘মহারাষ্ট্র মডেলের’ পুনরাবৃত্তি ঘটানো যেতে পারে বিহারে। ঘটনাচক্রে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ছেড়ে একনাথ শিন্ডের শিবিরে নাম লেখানো বিধায়কদের বড় অংশের বিরুদ্ধেও ‘সক্রিয়’ ছিল ইডি।