লালু-পুত্র তেজস্বী যাদব। ছবি পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশের ভোটে ‘দুই যুবরাজের’ যে হাল হয়েছিল, বিহারে সেই পরিণতিই হতে চলেছে। বিহারের দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে লালু প্রসাদের শক্ত ঘাঁটি ছপরায় পৌঁছে আজ এই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লখনউয়ের কুর্সির লড়াইয়ে সে দিন অখিলেশ যাদব ও রাহুল গাঁধীকে ‘দুই যুবরাজ’ আখ্যা দিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মোদী। আজ সেই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী ও লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবকে।
জনসভায় বিহার ও কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের কাজের প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গিয়ে মোদী আজ বিরোধী নেতাদের আক্রমণ করতে শুরু করেন। বলেন, ‘‘বিহারে এখন ডাবল ইঞ্জিনের সরকার চলছে। তবে এর বিপরীতে রয়েছেন দুই যুবরাজ। এর মধ্যে এক জন আবার জঙ্গলরাজের যুবরাজ। ডাবল ইঞ্জিনের এনডিএ সরকার বিহারের উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ। আর এই দুই যুবরাজ নিজেদের সিংহাসন বাঁচাতে লড়ছেন।’’ তেজস্বী ও রাহুলের উদ্দেশে এই কটাক্ষের পরেই উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফলাফলের কথা টেনে আনেন মোদী। ভোটারদের সামনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘৩-৪ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে ভোট হয়েছিল যখন, সেখানেও এমন দুই যুবরাজ বাসের উপর চড়ে, কালো জ্যাকেট পরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে হাত নাড়িয়েছিলেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, উত্তরপ্রদেশের মানুষ ওই দুই যুবরাজকে চিনে ফেলে ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
আর সে দিন লখনউয়ের লড়াইয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল, এ বার পটনাতে তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। মোদীর কথায়, ‘‘ওখানকার এক যুবরাজ (রাহুল) এখন জঙ্গলরাজের যুবরাজের (তেজস্বী) সঙ্গে মিলে গিয়েছেন। এখন ওঁরা হাত নাড়াচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে দুই যুবরাজের যে পরিণতি হয়েছিল, বিহারেও দুই যুবরাজেরও বিশেষ করে জঙ্গলরাজের যুবরাজের সেই পরিণতি হবে।’’ এই ‘দুই যুবরাজ’ বিহারকে নিয়ে ভাবেন না বলেও দাবি মোদীর।
আরও পড়ুন: মদ তো বন্ধ, কিন্তু জাহাঙ্গিরের মুদ্রা?
আরও পড়ুন: বিহারেও পুলওয়ামা অস্ত্র মোদীর, সঙ্গে রামমন্দির
প্রধানমন্ত্রী ‘ডাবল ইঞ্জিনের সরকার’ নিয়ে গুণগান গাওয়ায় পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন আরজেডি নেতা। মোদীর সভা শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তেজস্বী বলেন, ‘‘বিহারে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার থাকা সত্ত্বেও বেকারত্বের হার ৪৬ শতাংশেরও বেশি কেন, প্রধানমন্ত্রী তা বলেননি। বিহার থেকে শ্রমিকদের অন্য জায়গায় কাজ করতে যেতে হয় কেন, সে কথাও জানাননি তিনি।’’ আরজেডি নেতার মন্তব্য, ‘‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর তথ্য বলছে, অপরাধের নিরিখে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় বিহার এগিয়ে। আর নীতি আয়োগ বলছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় এই রাজ্য পিছনের সারিতে।’’ মোদীর সভার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিহারের অনুন্নয়ন নিয়ে ১১টি প্রশ্নও ছুড়ে দেন তেজস্বী।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও আজ টুইট করে মোদীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘২০১৫ সালের ভোটের সময়ে আপনি বলেছিলেন, নীতীশ কুমার অষ্টাদশ শতকের মানসিকতার মানুষ। আর আজ আপনি ডাবল ইঞ্জিনের কথা বলছেন। সত্যি ব্যাপারটা হল, আপনাদের সরকার দ্বিগুণ প্রতারণার সরকার।’’
প্রধানমন্ত্রী আজ নীতীশ সরকারের গুণগান করায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তাঁরই অন্যতম প্রশংসক এলজেডি নেতা চিরাগ পাসোয়ান। জেডিইউ নেতাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বিহারের ভোটের ফলপ্রকাশের পরে বিজেপিকে ছেড়ে নীতীশ আরজেডির মহাজোটে যোগ দেবেন। আর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ-র বিরুদ্ধেই লড়বেন তিনি। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে চিরাগের মন্তব্য, ‘‘ডিগবাজি খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে নীতীশ কুমারের। লালু প্রসাদের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংঘাতের পরে নীতীশ ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিছু দিন পরে পুরনো শরিককে ছেড়ে তিনি দীর্ঘ দিনের প্রতিপক্ষের হাত ধরেন। আবার মোদীর বিরুদ্ধে বিষ ছড়ানোর দু’বছরের মধ্যে লালুকে ছেড়ে ফের এনডিএতে যোগ দেন।’’ চিরাগ বলেন, ‘‘আমার কথা শুনে রাখুন, ভোটের প্রচারে লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলছেন নীতীশ কুমার— কিন্তু দেখবেন, তিনিই আরজেডির মহাজোটের সঙ্গে মিলে সরকার গড়ার চেষ্টা করবেন।’’ রামবিলাস-পুত্রের দাবি, বিহারের ভোটে মোদীকে এখন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কারণ, নীতীশকে কেউ ভোট দিতে রাজি নন।