নীতীশ কুমার। ফাইল চিত্র।
দু’বছর আগে বিহার বিধানসভার নির্বাচনের পর থেকেই নানা বিষয়ে শাসক জোটের দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) এবং বিজেপির মধ্যে মতানৈক্য সামনে এসেছে। সেই দড়ি টানাটানির জেরে এ বার আরও আগ্রাসী ভূমিকা নেওয়ার বার্তা দিলেন নীতীশ। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের ঘনিষ্ঠ জেডি(ইউ) মন্ত্রী বিজয় চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মঙ্গলবার আমাদের দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং নেতারা বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। এর পর পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, পাঁচ বছর পরে ফের বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’ গড়তে সক্রিয় হতে পারেন নীতীশ। প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় জেডি(ইউ)-র তরফে জানানো হয়েছিলস, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাদের দলের কোনও প্রতিনিধি থাকবেন না। এর পর রাতে নীতীশ ফোন করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে।
এই ঘটনাপ্রবাহে বিহারে পালাবদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেখছেন অনেকেই। ঘটনাচক্রে, রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকও এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এই নিয় ১৭ জুলাই থেকে চতুর্থ বার কেন্দ্রের কোনও বৈঠকে গরহাজির রইলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে, সোমবার দুপুর থেকেই বিহারে রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। জেডি(ইউ)-র পাশাপাশি আরজেডি এবং কংগ্রেসের বিধায়কদেরও দলীয় নেতৃত্বের তরফে রাজধানী পটনায় আনা হচ্ছে।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি মোদীকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করার পরে প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন নীতিশ। লোকসভা ভোটে একা লড়ে ভরাডুবি হয় জেডি(ইউ)-র। এর পর ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাজোট’ (মহাগঠবন্ধন) গড়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু লালুপ্রসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের ২০১৭-য় বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান।
২০২০-র বিধানসভা ভোটে তুলনায় কম আসন পেয়েও নীতীশের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক বিজেপি-জেডি(ইউ) জোটে সমস্যা বাড়ছিল। কখনও জাতপাত-ভিত্তিক জনগণনা, কখনও সিএএ, কখনও ‘বিহারের সন্ত্রাসের রমরমা’ নিয়ে প্রকাশ্যে তরজা মেতেছেন দু’দলের নেতারা। তবে নেপথ্যে সম্ভবত ছিল জেডি(ইউ)-কে চাপে রাখতে বিজেপির ‘ভূমিকা’। ২০২০-র ওই নির্বাচনে এলজেপি নেতা রামবিলাস পাসোয়ান বিজেপি-কে ‘ছাড়’ দিয়ে বেছে বেছে জেডি(ইউ)-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগাভাগির ব্যবস্থা করেছিলেন। নীতীশের দলের অভিযোগ ছিল, বিজেপির বিহার এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের চক্রান্তেই এমন ঘটনা ঘটেছে।