বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ফাইল চিত্র।
খাতায়-কলমে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ হলেও বিহারে বিষাক্ত মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা বারবারই প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি সে রাজ্যের ছপরায় বিষাক্ত মদ খেয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এ বার এই প্রসঙ্গেই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। খানিক হতাশার সুরেই তিনি রাজ্যবাসীকে সাবধান করে বললেন, মদ খেলে মরতে তো হবেই।
একই সঙ্গে সকলের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “বিহারের মতো ড্রাই স্টেটে (মদ নিষিদ্ধ করা রাজ্য) মদ কিনবেন না। কারণ অবৈধ উপায়ে আমদানি করা ভেজাল এবং বিষাক্ত (মদ) বিক্রি করার চেষ্টা হতে পারে।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মদ কিনতে গিয়ে ধরা পড়া কোনও গরিব মানুষকে গ্রেফতার করা হবে না। গ্রেফতার করা হবে মদ প্রস্তুতকারক এবং অবৈধ ভাবে মদ আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। এই মর্মে তিনি পুলিশ আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নীতীশের সাম্প্রতিক মদ-মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে তাঁর একদা জোটসঙ্গী, অধুনা বিরোধী বিজেপি। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় নীতীশকে ‘অসংবেদনশীল মুখ্যমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিষাক্ত মদ খেয়ে রাজ্যের গরিব মানুষরা মারা গেলেও নীতীশ শুধু মদ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের সাফল্য নিয়েই চিন্তিত রয়েছেন।
এ নিয়ে বুধবার উত্তপ্ত হয় বিহার বিধানসভাও। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক বিজয়কুমার সিংহ বুধবার প্রশ্নোত্তর পর্বে ছপরায় বিষমদে মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করেন, শাসক শিবিরের একাংশের মদতে রাজ্য জুড়ে বেআইনি মদের কারবার চলছে। তাই বেতিয়া, গোপালগঞ্জ, নালন্দার মতো জেলায় ধারাবাহিক ভাবে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ সারণ জেলার ছপরা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করার পরেও কী ভাবে বার বার এমন ঘটনা ঘটছে? এমন গুরুত্বহীন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনই বা কী?’’
ছপরাকাণ্ড নিয়ে বিরোধীরা বার বার বিধানসভায় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুললে মেজাজ হারান নীতীশ। উত্তেজিত স্বরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তো কী হয়েছে? তোমরা মাতাল হয়ে গিয়েছ।’’ নীতীশের এমন মন্তব্যের পরেও নিরস্ত হননি বিরোধী বিধায়কেরা। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন। সে সময় বিজেপির সহযোগী ছিলেন তিনি। কাগজে-কলমে বিহারে মদ পুরোপুরি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কয়েক বছরে একাধিক বার বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বিহারে।