কোভিড বিধি মেনে ভোট। ছবি সৌজন্য টুইটার।
বিহারে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোট নির্বিঘ্নে মিটলেও শনিবার তৃতীয় দফার ভোটে অশান্তি ছড়াল পূর্ণিয়ার কসবায়। ভোট দিতে আসা এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। তার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ভোটদাতারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে দু’ঘণ্টা ভোট বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। অন্য দিকে, পূর্ণিয়ারই ধামদহতে ২৮২ নম্বর বুথের বাইরে গুলি চলেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক। এই ঘটনার পর গোটা নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়।
আজ তৃতীয় তথা শেষ দফার ভোট ছিল বিহারে। সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এই পর্বে ১৯ জেলার ৭৮টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০৪। ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৩৪ লক্ষ মানুষ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৩.৭২ শতাংশ।
শেষ দফার নির্বাচনের মাঝেই মৃত্যু হল বিহারের মধুবনীর নির্দল প্রার্থী নীরজ কুমার ঝা-র। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পটনার এমস-এ ভর্তি ছিলেন তিনি। এ দিন হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই পর্বে ৭৮টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনের দিকে নজর ছিল সব রাজনৈতিক দলগুলির। ওই দশটি আসন হল— বানমাঁখি, কসবা, সিক্তা, রক্সৌল, গাইঘাট, হারলাখি, চিরাইয়া, জালে এবং বেনিয়াপট্টি।
এ দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে রাজ্যের ভোটারদের ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিহার বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় তথা শেষ দফা আজ। রাজ্যের সব ভোটারের কাছে অনুরোধ আপনারা ভোট দিন। গণতন্ত্রকে মজবুত করুন। তবে মাস্ক পরতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ভুলবেন না।’
রাজ্যবাসীকে ভোটের আহ্বান জানিয়ে এ দিন নীতীশ কুমার বলেন, “আপনাদের এক একটা ভোট বিহারের অগ্রগতির চাকা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।” তেজস্বী যাদব এ দিন ফের নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “ রাজ্য পরিচালনায় ব্যর্থ নীতীশ কুমার। উনি ক্লান্ত।”
তৃতীয় দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির নীরজ কুমার। প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মীয় তিনি। ছতরপুর বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে তিনি লড়েছেন। বিহারিগঞ্জ ক্ষেত্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শরদ যাদবের মেয়ে সুভাষিনী শরদ যাদব। এ ছাড়া এই পর্বে মুজফফরনগর থেকে লড়াই করেছেন বিহার বিধানসভার স্পিকার তথা জনতা দল ইউনাউটেড নেতা বিজয়কুমার চৌধুরি এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুরেশকুমার শর্মা।
এই দফায় ভোট হয়েছে কোশী-সীমাঞ্চলেও। ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পর্বে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে এই এলাকা। জোর টক্কর হবে এনডিএ এবং মহাগঠবন্ধনের। তবে এই অঞ্চলে আবার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-র অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর আধিপত্য বেশি। সীমাঞ্চলের ২৪টি প্রভাবিত আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এআইএমআইএম। ফলে এই অঞ্চলে লড়াইটা ত্রিমুখী হবে।
আসাদউদ্দিন ফ্যাক্টর তো আছেই, পাশাপাশি এটা প্রাক্তন সাংসদ পাপ্পু যাদবেরও এলাকা। সেই ফ্যাক্টরটাও এই দফায় কাজে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছিল। ভোট পড়েছিল ৫৫.৭০ শতাংশ। ৯৪টি আসনে ভোট হয়েছিল ওই দফায়। দ্বিতীয় দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের দুই ছেলে তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ যাদব। ছিলেন শত্রুঘ্ন সিন্হার ছেলে লভ সিন্হা। দ্বিতীয় দফার ভোট নির্বিঘ্নেই মিটেছে। করোনা আবহের মধ্যে ভোট হওয়ার কারণে প্রথম দফায় সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তবে দ্বিতীয় দফায় আরও সতর্ক ভাবে পা ফেলে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিহারের ভোট প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। দু’দফাতেই ভাল সাড়া মিলেছে।