কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবিতে যন্তর-মন্তরের সামনে প্রতিবাদসভা। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
রাস্তার ধারেই প্রতিবাদসভা। তার এক পাশে পাতা চেয়ারের সারির একটিতে চুপ করে বসেছিলেন তিনি। হাতে ধরা এক টুকরো কাগজে লেখা নিজের বক্তব্য। বাকিদের কথা শুনছিলেন মন দিয়ে। পথসভার সঞ্চালক মাইকে ডাকতেই গর্জে উঠলেন আলিয়া মুবারক। জম্মু-কাশ্মীরের প্রবাদপ্রতিম নেতা শেখ আবদুল্লার বড় নাতনি তিনি। আবদুল্লার মেয়ে খালিদা এবং তাঁর স্বামী গুলাম মহম্মদ শাহের কন্যা।
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পরে টানা ৭৫ দিন জম্মু ও কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে আলিয়া বললেন, ‘‘কাশ্মীরিরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। বরং সেই ১৯৫৩ সাল থেকে টানা প্রতারিত হয়ে আসছি আমরাই।’’ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে তাঁর দাবি, অবিলম্বে সেনা পাহারা কমিয়ে উপত্যকায় মানুষের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিক দিল্লি।
৭৫ দিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে সাধারণ মানুষকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখে দিল্লির সরকার সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করছে— এই অভিযোগ তুলে শনিবার যন্তর-মন্তরে এক পথসভার আয়োজন করেছিলেন বিভিন্ন সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মীরা। সেখানেই আবদুল্লা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধির অভিযোগ, সংসদীয়, বিচার বিভাগীয় ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না-করেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকে কাশ্মীরকে কার্যত ‘জেলখানা’ বানিয়ে রেখেছে কেন্দ্র।
এই সভা থেকেই সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার অভিযোগ, পরিস্থিতি সঙ্গিন বলেই হাল খতিয়ে দেখতে কাশ্মীরে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। ঢোকার অনুমতি মেলেনি। ঢুকতে দেওয়া হয়নি সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি (পরে অবশ্য ইয়েচুরি গিয়েছিলেন), কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীকেও। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের মানুষকে আপন করে নেওয়ার কথা মুখে বললেও আসলে এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক তাস খেলছে বিজেপি। এই ৭৫ দিনে উপত্যকার স্কুল থেকে হাসপাতাল— সর্বত্র পরিস্থিতি কতটা বেহাল, কী ভাবে যন্ত্রণায় কাতরাতে হচ্ছে আসন্নপ্রসবাকে, সেই কথা তুলে ধরেন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান উইমেনের সাধারণ সম্পাদক অ্যানি রাজা। সারাক্ষণ বাড়ির সামনে সেনার পাহারা। দীর্ঘ দিন বন্ধ মোবাইল (এখন আংশিক চালু), ইন্টারনেট-সহ সমস্ত যোগাযোগ। এই অবস্থায় জনজীবন কতটা বিপর্যস্ত, তার ছবি তুলে ধরেন উপত্যকা থেকে আসা বিভিন্ন পেশার কয়েক জন মানুষও।